চলতি বছর বন্যার প্রকোপ তুলনামূলক কম হওয়ায় তিস্তার বুকে জেগে ওঠে শতাধিক চরে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে দারুণ খুশি চরাঞ্চলের কৃষকেরা। সরে জমিনে দেখা গেছে, চরের কৃষকেরা খেত থেকে আমন ধান কেটে ধরে তুলছেন। কেউ কেউ ধান মাড়াই করছেন। 

কৃষরা জানান, চরে এখন ধান, ভুট্টা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টি কুমড়া, শসা, মরিচ, বাদাম সহ অন্তর ১৫ রকমের ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। মাটির উর্বরতা শক্তি, ভালো বীজ নির্বাচন আর সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে মূল ভূখন্ডের তুলনায় এখন চরে অনেক ভালো ফসল ফলছে। তাঁদের দাবি, তিস্তা নদী শাসন করা গেলে অনেক বেশি চরকে উৎপাদনের আওতায় আনা সম্ভব হবে; যার মধ্য দিয়ে মজবুত হবে দেশের কৃষি ও অর্থনীতি।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, নীলফামারী ও গাইবান্ধায় ১১৫ কিলোমিটার তিস্তার বুকে ২৩৬ টি চর আছে। এর প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমি আবাদি। 

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছাতুনামা চরের কৃষক হাসানুর রহমান (৫০) বলেন, ‘এ বছর ১৩ বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছিলাম। ১০ বিঘা জমির ধান ঘরে তুলছি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বাকি জমির ধান কাটব।’ তিনি জানান, প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ১৬ থেকে ১৭ মণ ধানের ফলন পেয়েছেন। গত বছরও ১২ বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছিলাম। বন্যার কারণে বেশির ভাগ জমির ধান নষ্ট হয়েছিল। এ বছর বন্যার প্রকোপ কম থাকায় চরের জমি থেকে আমন ধানের আশানুরূপ ফলন পেয়েছেন। 

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার চর ধুবনির কৃষক বাহাদুর ইসলাম (৪০) বলেন, ‘এ বছর বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়নি। ৬ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। ৯৫ মণ ফলন হয়েছে। গত বছর একই পরিমাণ জমি থেকে মাত্র ৫০ মণ ধান পেয়েছিলাম।’ তিনি জানান, প্রতি বিঘা জমিতে আমন চাষে তাঁর খরচ হয়েছে ৫-৬ হাজার টাকা। আর বাজারে প্রতি মণ ধান ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

এদিকে বন্যার প্রকোপ কম হলেও ভাঙ্গন থেমে নেই নদীপারের এলাকাগুলোয়। ডিমলার চর কিসামতের কৃষক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর ১০ বিঘার মধ্যে ৪ বিঘা জমি ধানসহ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।’

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় তিস্তার চরাঞ্চলে আমন ধানসহ নানা ধরনের ফসল ও সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগ চরাঞ্চলের কৃষকদের ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে নিক নির্দেশনা সহ সার-বীজ দিয়ে সহায়তা করে থাকে।