মোঃ রাফসান জানি,ভোলা ;
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোলা-৪ (চরফ্যাসন-মনপুরা) আসনে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যেই বিএনপির একাধিক নেতা দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে সক্রিয় প্রচারণায় নেমেছেন। তবে জামায়াতে ইসলামী তাদের
পক্ষ থেকে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশও প্রার্থী দিয়েছে। ফলে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঘিরে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন না হলে জামায়াত সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারে।ভোলা-৪ আসন বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে গঠিত। চরফ্যাসন ও মনপুরা উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে রয়েছে ১টি পৌরসভা, ৫টি থানা ও ২৫টি ইউনিয়ন। মোট ভোটার ৪ লাখ ৬০ হাজার ৯৮৬
জন। ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ অঞ্চল হওয়ায় এখানকার প্রধান ইস্যু নদীভাঙন, যোগাযোগ অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা। ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ একক ভাবে আধিপত্য বিস্তার করলেও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ জামায়াত ও অন্যান্য ইসলামি দলগুলো উল্লেখযোগ্য
ভোট পেয়েছে।
ভোলা-৪ আসনে বিএনপির টিকিট পেতে ইতিমধ্যেই তৎপর চার প্রভাবশালী নেতা।
নাজিম উদ্দিন আলম: তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক এজিএস। ২০১৮ সালেও তিনি এ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। রাজপথের আন্দোলনে হামলা ও মামলার শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতাকে তিনি
ভোটের মূল পুঁজি হিসেবে কাজে লাগাতে চান। তিনি বলেন, “রাজপথের পরিশ্রম বৃথা যায় না। এবারও দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।”
মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন: যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। ২০১৮ সালে মনোনয়ন ফরম তুলেও দলের নির্দেশে তা প্রত্যাহার করেছিলেন। এ বছর আবারও এলাকায় সক্রিয় হয়ে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। বাজারে
পথসভা, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন নিয়মিত। তিনি বলেন, “ভোলা-৪ আসনের উন্নয়নে আমার বাস্তবমুখী পরিকল্পনা রয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ট্যুরিজম আমার অগ্রাধিকার।”
বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশী শোয়েব মুনতাছিরঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নির্বাহী সদস্য শোয়েব মো. মুনতাছির মোর্শেদ প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির টিকিট প্রত্যাশা করছেন। চরফ্যাসন পৌরসভা ও উপজেলার ২১ ইউনিয়নে ব্যানার-ফেস্টুনে নিজেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে তুলে ধরে তিনি এলাকাজুড়ে পরিচিতি পেয়েছেন। স্থানীয়দের অনেকে মনে করেন, শিক্ষিত ও যোগ্য তরুণ
নেতৃত্ব রাজনীতিতে এলে দলের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।শোয়েব মোঃ মুনতাছির মোর্শেদ চরফ্যাসন পৌরসভার কৃতি সন্তান। তিনি বরিশাল ক্যাডেট কলেজের প্রাক্তন ছাত্র এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। তার
বাবা মরহুম অধ্যক্ষ মাকসুদুর রহমান চরফ্যাসন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ভোলা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি চরফ্যাসন উপজেলা বিএনপি ও জেলা
বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
এডভোকেট মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া: বিএনপির
আইনজীবী ফোরামের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। চরফ্যাসন তথাভোলার উন্নয়ন নিয়ে তিনি নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তার অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে চরফ্যাসনে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা, প্রতিটি পরিবার থেকে একজনকে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া, সন্ত্রাস ও মাদক দমন। তিনি দাবি করেন, নদীভাঙনরোধে স্থানীয়ভাবে তিনি ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছেন।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ভোলা জেলার সাবেক আমির ও বরিশাল বিভাগীয় অঞ্চল পরিচালনা টিমের সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মোস্তফা কামালকে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তিনি দীর্ঘদিন রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। তার দাবি, তার বড় ছেলে গুম হয়ে নিহত হয়েছেন। নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি চরফ্যাসন-মনপুরাকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদকমুক্ত করার পাশাপাশি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছেন।
বাংলাদেশ ইসলামি আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রার্থী হয়েছেন অধ্যাপক এ এম এম কামাল। তিনি এলাকায় নিয়মিত জনসংযোগ চালাচ্ছেন। দলটির দাবি, আসন্ন নির্বাচনে তারা তৃণমূল পর্যায়ে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলবে।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভোলা-৪ আসনে বিএনপি একাধিক গ্রুপে বিভক্ত। গ্রুপিং রাজনীতি যদি অব্যাহত থাকে, তবে জামায়াত সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। অন্যদিকে ইসলামি আন্দোলনের প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে।
একাধিক ভোটারের সাথে কথা বলে জানাযায়,“বিএনপির ভেতরের কোন্দল কমবে কিনা সেটিই এখন প্রশ্ন। যদি তারা একক নেতৃত্বে মাঠে নামতে পারে, তবে জামায়াত কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়বে।”ভোলা-৪ আসনের রাজনীতি তাই এখন অনেকটাই অনিশ্চিত ও জটিল সমীকরণের মধ্যে আটকে আছে। বিএনপি এখনো চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করেনি। অন্যদিকে জামায়াত ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে একক প্রার্থীকে ঘিরে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। ইসলামি আন্দোলন ও অন্যান্য ছোট দলও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকায় দিন যত ঘনিয়ে আসছে, তত জটিল হয়ে উঠছে।
এ জাতীয় আরো খবর..