×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-১২-১৮
  • ৬৬ বার পঠিত
জাহিদ খান(কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি) 
কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার বামন ডাঙ্গা নাসের মামুদ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ঝাড়ুদার শ্রী কমল চন্দ্র দাস(৪৭)  প্রধান শিক্ষকের রোষানলে পড়ে আকস্মিকভাবে চাকরি হারিয়ে পাচ বছর ধরে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, কমল চন্দ্র দাস দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বিদ্যালয়টির পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে আসছিলেন। ২০১৯ সালে হঠাৎ বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মোছাঃ সুলতানা বানু ও কমল চন্দ্রের মধ্যে এক সামান্য বিষয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। এরই জের ধরে প্রধান শিক্ষক সম্পূর্ণ অনিয়ম তান্ত্রিক ভাবে কমল কে সাময়িক বরখাস্ত করেন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই।

তারপর কমল চন্দ্র বিভিন্ন ভাবে অনুনয় বিনয় করেও কোনভাবেই প্রধান শিক্ষক সুলতানা বানুর মন গলাতে পারে নাই।এর প্রধান কারন তার স্বামী মোঃ আব্দুল খালেক মিয়া।তিনি নাসের মামুদ বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতিও ছিলেন।বিদ্যালয় টির প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি স্বামী স্ত্রী হওয়ায় তারা দিনকে রাত রাতকে দিন বানাতে পরোয়া করেনি।উল্লেখ্য - আঃ খালেক ব্যাপারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামিলীগ সরকারের বামন ডাঙ্গা ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক। 

কমল চন্দ্র কোনো ভাবেই বিষয় টি নিস্পত্তি করতে না পেরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি আবেদন করেন।কিন্তু সভাপতি আঃ খালেক আওয়ামীলীগ নেতা হওয়ায় এম পি, উপজেলা চেয়ারম্যান স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় বিষয় টি ধামা চাপা দিয়ে দেয়।উপরন্তু কমল কে বিভিন্ন ভাবে চাপ দিতে থাকে আপোষে চাকুরী ইস্তফা দিতে।এর কারণ, কমল ইস্তফা দিলেই নতুন একজন কে নিয়োগ দিতে পারে।

 কমল চন্দ্র ইস্তফা না দিয়েই স্থানীয় নেতা নেত্রীর দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকে।তারপর শুরু হয় মহামারী করোনা।প্রায় দুই বছর করোনার কারনে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ও কমলের বেতন ভাতা বন্ধ রাখার কারনে পরিবার পরিজন নিয়ে বাচার তাগিদে ঢাকা চলে যান এবং রিক্সা চালিয়ে দিনাতিপাত করতে থাকে ও মাঝে মাঝে এসে একে ওকে ধরে চাকুরী ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করেন। কোনো উপায় না পেয়ে কমল তার গোত্রের লোক জন নিয়ে মানব বন্ধন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে আবেদন, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কে আবেদন করেও প্রধান শিক্ষক ও তার স্বামীর প্রভাব প্রতিপত্তির কারনে কোনো সুবিচার পাননি।অতঃপর কমল চন্দ্র শেষ ভরসা ডিজি মহোদয় বরাবর আবেদন করেন।ডিজি মহোদয় ঘটনা তদন্তের জন্য জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর তদন্তের নির্দেশ প্রেরণ করলেও স্থানীয় আওয়ামিলীগ এম পি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এর হস্তক্ষেপে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।এমন সময় বিদ্যালয়ের সভাপতি কমল চন্দ্র কে বিষয় টি নিস্পত্তির কথা বলে ডেকে নিয়ে বেদম মারপিট ও একটি কক্ষে আটকিয়ে রাখে।স্থানীয় কোকজন ৯৯৯ এ কল করে পুলিশ দিয়ে তাকে উদ্ধার করায়।কিন্তু প্রভাবের কারনে বিষয় টির মামলাও কমল করতে পারেনি।এ বিষয়ে তদানিন্তন অফিসার ইনচার্জ কে মুঠোফোনে জিজ্ঞাসা করলে কমল কে উদ্ধার করার সত্যতা স্বীকার করলেও মামলা না  নেয়ার বিষয় জানান প্রভাবশালী মহলের চাপে মামলা নিতে পারেন নি।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষকের সাথে ও স্থানীয় নানান শ্রেণির  জনসাধারণের সাথে কথা বললে তারা জানান কমল পরিশ্রমী কর্মী ছিলেন। তার আচরণ এবং কাজের মান নিয়ে কখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কিন্তু প্রধান শিক্ষক, সভাপতি স্বামী স্ত্রী হওয়ায় ও সভাপতি ফ্যাসিস্ট সরকারের নেতা হওয়ায় তারা যা ইচ্ছা তাই করেছেন।কেউ প্রতিবাদ করলেই তার উপর নানান হুমকি ধামকি প্রদান করা হতো।বামন ডাঙ্গা বাজারের একজন দোকানদার জানান কমল  খুবই নিরীহ মানুষ। স্কুল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য সে সব সময় পরিশ্রম করত। হঠাৎ তাকে এভাবে বরখাস্ত করা অমানবিক ও  স্বেচ্ছাচারিতাও বটে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাঃ সুলতানা বানু  বলেন, “কিছু নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।সঠিক নিয়ম মেনে বরখাস্ত করা হয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে বিষয়টি নিয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।

চাকরি হারিয়ে হতাশ কমল চন্দ্র দাস বর্তমানে আর্থিক সংকটে ভুগছেন। তিনি জানান, “স্কুলটিই ছিল আমার একমাত্র রোজগারের জায়গা। বিনা কারণে আমাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এখন আমার আর কোনো উপার্জনের পথ নেই।”

৫ আগষ্টের পট পরিবর্তন হওয়ায় কমল চন্দ্র দাস আবার আশায় বুক বেধে নানান জনের নিকট প্রতিকার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।এ বিষয়ে স্থানীয় শিক্ষক সংগঠনের নেতা নাগেশ্বরী ডি এম একাডেমীর প্রধান শিক্ষক কে এম আনিছুর রহমান,খেলার ভিটা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ ফজলুল হক,সমাজ কল্যাণ বালিকা বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ওমর ফারুক,জাগরণী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মো: জাহিদুল ইসলাম,সাপখাওয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক মোঃ মোজাম্মেল হক দুদু প্রমুখ সম্প্রতি  দফায় দফায় প্রধান শিক্ষক ও কমল চন্দ্র কে নিয়ে সমাধানের লক্ষ্যে বসেও প্রধান শিক্ষকের অসহযোগিতা ও অনড় অবস্থানের কারনে সমাধানে ব্যার্থ হন।

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: কামরুল ইসলাম সাহেব কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান কমল চন্দ্রের বরখাস্ত নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে হয়নি।তার বেতন ভাতা এখনো প্রতিষ্ঠান এ আসছে।তিনিও বিষয় টির মানবিক সমাধান কামনা করেন।

এলাকার সমাজকর্মী ও স্থানীয় নেতারা কামালের এই অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন। বিষয়টি আরও তদন্তের জন্য শিক্ষা বোর্ড বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
lube
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat