মুজাহিদ হোসেন,জেলা প্রতিনিধি নওগাঁঃ
ডিজিটাল যুগের সবচেয়ে বড় অর্জন স্মার্টফোন। এটি মানুষের হাতে এনে দিয়েছে অসংখ্য সুবিধা, তবে একইসাথে তৈরি করছে এক অদৃশ্য সামাজিক সংকট। মানুষ যতটা প্রযুক্তির কাছে যাচ্ছে, ততটাই দূরে সরে যাচ্ছে পরিবার থেকে।
একসময় রাতে স্বামী-স্ত্রী খাটে বসে দিনের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করত, গল্প করত। এখন দেখা যায়, দু’জন পাশাপাশি শুয়ে থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিজের নিজের ফোনে ব্যস্ত। ভালোবাসা ও আন্তরিকতার জায়গা দখল করেছে স্ক্রিনের আলো।
শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি ভিন্ন নয়। আগে নামাজের পর বই নিয়ে পড়ার টেবিলে বসত, আর এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডুবে থাকে ইউটিউব, ফেসবুক বা অনলাইন গেমসে। এতে শিক্ষাজীবন যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে মানসিক চাপ ও অস্থিরতা।
টেলিভিশন একসময় ছিল পারিবারিক বিনোদনের বড় মাধ্যম। নাটক, খবর কিংবা সিনেমা দেখার সময় পরিবারে জমত মিলনমেলা। কিন্তু আজ প্রত্যেকে আলাদা স্ক্রিনে নিজের মতো কনটেন্ট দেখে, ফলে পারিবারিক একতা ভেঙে পড়ছে।
এমনকি গ্রামীণ জীবনেও এসেছে পরিবর্তন। আগে সন্ধ্যার পর টর্চলাইট হাতে উঠোনে বা গ্রামে খেলাধুলা ও আড্ডায় মেতে উঠত ছেলেমেয়েরা। এখন সেই টর্চলাইটের জায়গা নিয়েছে মোবাইলের আলো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তি ছাড়া আধুনিক জীবন কল্পনা করা যায় না। তবে মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার সামাজিক সংকট তৈরি করছে। স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা, বাবা-মা ও সন্তানের সম্পর্ক, পারিবারিক বন্ধন—সব কিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তাদের পরামর্শ, সময় এসেছে সচেতন হওয়ার। পরিবারে নির্দিষ্ট সময় মোবাইল থেকে দূরে থেকে একে অপরের সঙ্গে সময় কাটানো জরুরি। নইলে আগামী প্রজন্ম পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, যা জাতির জন্য ভয়ংকর হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।