পরিতোষ বড়ুয়া রানা, চট্টগ্রাম ;
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের (ডিসি) পদ দুই সপ্তাহ ধরে শূন্য পড়ে আছে। জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমকে বদলি করা হলেও নতুন ডিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল এখনও যোগদান করেননি। এতে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রশাসনিক জেলার নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ২১ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমকে বদলির আদেশ জারি করা হয়। একই প্রজ্ঞাপনে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালকে চট্টগ্রামের নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু নানা কারণে ১৮ দিন পেরিয়ে গেলেও তিনি এখনও দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেননি।
এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ নথি, উন্নয়ন প্রকল্প, সরকারি তদারকি কার্যক্রমসহ জনসেবার বহু কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. কামরুজ্জামান অস্থায়ীভাবে ডিসির দায়িত্ব পালন করছেন।
মো. কামরুজ্জামান বলেন, “এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগই সিদ্ধান্ত দেবে। নতুন জেলা প্রশাসক মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদনের পরই যোগদান করবেন।”
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, ফরিদা খানমকে বদলির পর এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে তিনটি মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়েছে। প্রথমে তাঁকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে বদলি করা হয়। পরে তাঁকে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়, কিন্তু তিনি সেখানে যোগ দেননি। সর্বশেষ তাঁকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, জেলা প্রশাসকের অনুপস্থিতিতে জনসেবা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। জেলা প্রশাসক স্থানীয় সরকারের প্রধান হিসেবে জেলা পর্যায়ে সরকারি নীতিমালা বাস্তবায়ন, উন্নয়ন প্রকল্প তদারকি, ভূমি প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দুঃস্থ জনগণের সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। একজন ডিসির অনুপস্থিতিতে এসব কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “জেলা প্রশাসক ছাড়া জেলা পর্যায়ের নীতি বাস্তবায়ন, বাজেট অনুমোদন, প্রকল্প তদারকি এবং জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। ফলে জনসেবার মানেও প্রভাব পড়ছে।”
এক সপ্তাহে বদলি তিন দপ্তরের কর্মচারী
ডিসি বদলির পরপরই চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তিনজন কর্মচারীকেও অন্য জেলায় বদলি করা হয়।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নূরী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়,
জেলা প্রশাসনের নাজির মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনকে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে,
সার্টিফিকেট শাখার উপসহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাশকে খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে,
এবং চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরীকে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বদলি করা হয়।
তাদের ৯ অক্টোবরের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
‘খুব শিগগিরই নতুন ডিসি যোগ দিচ্ছেন’
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. জিয়াউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, “চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাজ করছে। খুব শিগগিরই নতুন ডিসি চট্টগ্রামে যোগ দেবেন।”
তবে জেলা প্রশাসকের পদ দীর্ঘদিন শূন্য থাকায় সাধারণ মানুষের বিভিন্ন সেবা প্রাপ্তি ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ভূমি সেবা, ত্রাণ বিতরণ, উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন ও সরকারি দপ্তরগুলোর সমন্বয় কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে ধীরগতি।
প্রশাসনিক কর্মকর্তারা মনে করছেন, দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই জেলায় প্রশাসনিক শূন্যতা যত দ্রুত দূর হবে, তত দ্রুতই উন্নয়ন ও জনসেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
এ জাতীয় আরো খবর..