×
  • প্রকাশিত : ২০২৫-১০-১১
  • ২৯ বার পঠিত

চট্টগ্রাম  প্রতিনিধি ;

চট্টগ্রামে জমিসংক্রান্ত একটি মামলায় এক সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা। দুই বছর আগের মামলা হঠাৎ সক্রিয় করে আসামি করা হয়েছে ওই সাংবাদিককে।

জানা গেছে, সাংবাদিক ইমন গত ২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক দেশ বর্তমানে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছিলেন, যার শিরোনাম ছিল ‘কাল্পনিক মামলায় হয়রানি বাড়ছে চট্টগ্রাম আদালতে’।

উপ-শিরোনামে উঠে এসেছিল— ‘জালিয়াতিতে জড়িত আইনজীবীদের একটি চক্র’। প্রতিবেদনটি চট্টগ্রামের আদালতভিত্তিক জাল মামলার প্রবণতা, চক্র ও হয়রানির নানা দিক তুলে ধরে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, ওই প্রতিবেদনে এই মামলার বাদীদের নাম উল্লেখই ছিল না। তারপরও এর এক বছর পর একটি জমিসংক্রান্ত মামলায় তার নাম ২ নম্বর আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

সাংবাদিক ইমনকে মামলায় জড়িয়ে পাঠানো হয়েছে একটি অদৃশ্য বার্তা— এমনটাই মনে করছেন চট্টগ্রামের অনেক সিনিয়র সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী। এক প্রবীণ আইনজীবী জানান, একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে সাংবাদিককে মামলায় টেনে আনা হলে, তা স্পষ্ট প্রতিশোধের নামান্তর।

২০২৪ সালের ৫ জুন মামলাটি দায়ের করেন নুরুল ইসলাম ও আলিমুল এহছান রাসেল। প্রধান আসামি আলাউদ্দিন, পরে যোগ করা হয় সাংবাদিক ইমনসহ আরও দুজনকে। চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো, মামলা দায়েরের পর দেড় বছর ধরে কোনো অগ্রগতি হয়নি। আদালতের একাধিক আদেশে তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হলেও বাদি বা পুলিশ কেউ সাড়া দেননি। এরপর হঠাৎ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে মামলা ‘সক্রিয়’ হয়।

আরেকটি বিতর্কের বিষয় হলো— ঘটনার এলাকা কোতোয়ালি বা বায়েজিদ থানার আওতায় হলেও তদন্তভার দেওয়া হয় ডবলমুরিং থানাকে। যদিও শেষ ঘটনাস্থল ডবলমুরিং এলাকা দেখানো হয়।

প্রকৃত মালিক হিসেবে নিজেকে দাবি করা আলাউদ্দিনের হাতে রয়েছে অনলাইন খাজনা পরিশোধের কাগজ, নামজারি, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের বহুতল ভবনের অনুমোদন ও পর পর তিনজন এসি (ভূমি) কর্মকর্তার লিখিত প্রতিবেদন। যার কারণে আগের একটি মামলা ইতোমধ্যে খারিজ হয়েছে। অর্থাৎ জমির মালিকানা নিয়ে আপাতত সরকারি বা বিচারিকভাবে বিতর্ক নেই।

মামলার বাদী নুরুল ইসলামের বক্তব্য রয়েছে অস্পষ্টতা। তিনি বলেন, মামলার মূল পরিকল্পনাকারী রাসেল। আমি তেমন কিছু জানি না। আমার নাম শুধু দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিককে জড়ানো এবং নানা অসংগতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি আইনজ্ঞ নই, এছাড়া একটি মামলা করতে গেলে অনেক কিছু লিখতে হয়। এদিকে রাসেল বলেন, আমি ভুল কিছু করিনি। আরও মামলা সামনে আসবে বলেও হুমকি দেন তিনি।

তবে মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা নামগুলো— যেমন ব্যাংকার আব্দুর রশিদ বা ব্যবসায়ী কফিল উদ্দিন— তাদের কারো কাছেই মামলার বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য নেই। এমনকি ব্যাংকার বাদীদের চিনেন না বলেও দাবি করেন। সবাই বলছেন, আলাউদ্দিনকে নিয়ে তাদের কোনো অভিযোগ নেই।

সাংবাদিক জিয়াউল হক ইমন বলেন, আমি একটি প্রতিবেদন করেছি— তা কোনো মামলার এই বাদীদের পক্ষকে আক্রমণ করে নয়, তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে। তারপরও আমাকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এটা শুধু আমার নয়, পুরো সাংবাদিক সমাজের বিরুদ্ধে একটা বার্তা। তিনি আরও বলেন, প্রতিশোধমূলক এ মামলার পেছনে এক চিহ্নিত আইনজীবী ও জমি সিন্ডিকেটে জড়িতদের নিয়ে সম্প্রতি অনুসন্ধান শুরু করেছি, সেটা জানতে পেরে দীর্ঘ দেড় বছর করা আগের ‘গোপন’ মামলা সচল করে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্রকারীদের অন্যায়-অবিচার তুলে ধরতে পিছপা হবো না।

সিএমপি পশ্চিম বিভাগের উপ-কমিশনার হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূঁইয়া বলেন, মামলাটি এখন তদন্তাধীন। আমরা যথাযথভাবে অনুসন্ধান করে আদালতে দ্রুত প্রতিবেদন দেব।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. আবদুস সাত্তার  বলেন, কেউ হয়রানিমূলক বা মিথ্যা মামলা করলে, সেটা আদালতে প্রমাণ হবে। আদালতে এসব মিথ্যা মামলা প্রতিহত করার সুযোগও রয়েছে বলে জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
lube
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat