নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার প্রাণসায়ের খাল রক্ষা ও সুপেয় পানির দাবিতে এক মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারক লিপি প্রদান করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকালে জেলা শহরের বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশবান্ধব সংগঠনের উদ্যোগে পাকাপোলের মোড় খালপাড়ে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি বিপ্লব হোসেনের সঞ্চালনায় জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ আজাদ হোসেন বেলাল এর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, স্বদেশ নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, প্রথম আলো পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি কল্যাণ ব্যানার্জী, ক্রিসেন্ট নির্বাহী পরিচালক আবু জাফর সিদ্দিকী, নদী বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সাতক্ষীরা পৌরসভা সাবেক কাউন্সিলর সাগর-উদ-দৌলা, ল স্টুডেন্টস্ ফোরাম সাতক্ষীরার সভাপতি ফিরোজ হোসেন, টিআইবি সাতক্ষীরার কো-অর্ডিনেটর আল আমিন, ভূমিহীন নেতা সামাদ হোসেন, ডিবিসি টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি এম বেলাল হোসেন, ঢাকা পোস্ট এর জেলা প্রতিনিধি ইব্রাহিম খলিল, ডেইলি ক্যাম্পাসের জেলা প্রতিনিধি হোসেন আলী সহ প্রমুখ।
আয়োজকরা জানান, সাতক্ষীরা শহরের প্রাণ সায়ের খাল’ একসময় জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। বর্তমানে খালটি দখল, দূষণ ও অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণের কারণে প্রায় মৃতপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। ফলে শহরে জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি, নোংরা পানি ও পরিবেশদূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। খাল পুনঃখনন, দখলমুক্তকরণ এবং সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেন বক্তারা।
বক্তবা বলেন, সাতক্ষীরার মানুষের প্রাণের দাবি শোভাবন্ধনকারি এ প্রাণসায়েরের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে। কোন রকম ময়লা আবর্জনা প্রাণসায়ের খালে ফেলতে দেওয়া হবে না। এক সময় সাতক্ষীরা শহরের বুক চিরে প্রবাহিত প্রাণসায়ের খাল জেলার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত একটি জলাধার। ব্রিটিশ আমলে স্থানীয় জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী ১৮৬০ থেকে ১৮৬৫ সালের দিকে শহরের উন্নয়ন, নৌযান চলাচল এবং কৃষিকাজের সুবিধার্থে এই খালটি খনন করেন। তার নামানুসারেই এর নাম হয় ‘প্রাণসায়ের খাল’। একসময় খালটি মরিচ্চাপ নদী থেকে বেতনা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল এবং এটি ছিল নৌযান চলাচল, সেচ ও স্থানীয় বাণিজ্যের প্রধান মাধ্যম। শহরের পানি নিষ্কাশন, কৃষি উৎপাদন এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায়ও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত। কিন্তু এ খালটি আজ মরা খালে পরিণত হয়েছে। এ খালকে বাঁচাতে আগামীতে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। খালের নান্দনিকতা ফিরিয়ে আনতে দুইপাড়ে পরিচ্ছন্নতা অভিযান, বৃক্ষরোপণ ও সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম হাতে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি যথাযথ স্থানে ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিন স্থাপন, নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার, অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম চালুর দাবি জানান।
বক্তারা আরও বলেন, “প্রাণ সায়ের খাল শুধু একটি খাল নয়—এটি সাতক্ষীরার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও জীবনধারার প্রতীক। একে বাঁচানো মানে সাতক্ষীরাকে বাঁচানো।” তারা অবিলম্বে খাল পুনঃখনন, দখলদার উচ্ছেদ ও সুপেয় পানির নিশ্চয়তা দিতে সরকারের কার্যকর উদ্যোগ কামনা করেন।
মানববন্ধনের আয়োজনে ছিল—অ্যাক্টিভিস্টা সাতক্ষীরা, ইয়ুথ এলায়েন্স সাতক্ষীরা, জেলা নাগরিক কমিটি, প্রথম আলো বন্ধুসভা, নদী বন ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি, বিডি ক্লিন, স্বদেশ, সাতক্ষীরা সাইবার ক্রাইম এলার্ট টিম, বারসিক, ভিডিবি, ক্রিসেন্ট, ল স্টুডেন্টস্ ফোরাম, গ্রিনম্যান, জনকল্যাণ সংস্থা, শরুব ইয়ুথ টিম, উত্তরন, প্রাণসায়ের ও পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ এবং সাংবাদিক সহ বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন।
এ জাতীয় আরো খবর..