হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:
হবিগঞ্জের মাধবপুরে অবৈধভাবে কৃষি জমির মাটি কেটে বিক্রির মহোৎসব চলছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এক্সক্যাভেটর ও ড্রেজার মেশিন বসিয়ে কৃষি জমির উর্বর মাটি কেটে ইটভাটাসহ জমি ভরাট কাজে বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না।রহস্যজনক কারণে স্থানীয় প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছেন।
জানা গেছে, এ উপজেলার অধিকাংশ কৃষিজমি তিন ফসলি। এখানে বিভিন্ন প্রকার সবজিসহ ধান আবাদ করা হয়। কিন্তু প্রতিবছর এ উপজেলায় বিপুল পরিমাণ জমির মাটি কাটা হচ্ছে। এ কারণে দিন দিন আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কৃষকদের থেকে মাটি কিনে তা ইটভাটাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হচ্ছেন মাটি ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলায় কয়েকটি শক্তিশালী মাটি ব্যবসায়ী চক্র গড়ে উঠেছে। এরা দরিদ্র কৃষককে নানা প্রলোভন দেখিয়ে জমির মাটি কিনে নিচ্ছে। আবার কেউ কেউ প্রয়োজনের তাগিদে নগদ অর্থ পেতে ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। ৮-১০ ফুট গভীর করে মাটি কাটার ফলে অনেক জমি পুকুর বা ডোবায় পরিণত হয়েছে। এসব জমিতে ফসল বা মাছ চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া কৃষিজমি থেকে কেটে নেওয়া মাটি বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রাক্টর বা ট্রলি গাড়ি। এসব ট্রাক্টর বা ট্রলির কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামীণ রাস্তাঘাটে খানা-খন্দ তৈরি হয়ে দ্রুত ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া ট্রাক্টর বা ট্রলি চলাচলের কারণে আবাদি জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রবিবার (০৫ জানুয়ারি) সকাল থেকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার পূর্ব মাধবপুর, আলাকপুর, শিবপুর, ধর্মঘর ইউনিয়নের আহম্মদপুর, কাজিরচক, গন্ধবপুর, চৌমুহনী ইউনিয়নের বিষ্ণপুর, কাশিমপুর, আরিছপুর, হরিণখোলা, মনোহরপুর, রামনগর, কমলপুর, বরুড়া, বহরা ইউনিয়নের বহরা, হবিবপুর, আফজলপুর, ঘিলাতলী, আদাঐর-ইউনিয়নের আদাঐর, গোপালপুর, মিঠাপুকুর, হালুয়াপাড়া, আন্দিউড়া ইউনিয়নের মিরনগর, হাড়িয়া,দুর্গাপুর, শাহজাহানপুর উত্তর বেজোড়া, খড়কি, নারায়ণখোলা,বুল্লা, বানেশ্বর, বাঘাসুরা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে রাতের বেলা এক্সক্যাভেটর দিয়ে ফসলি জমির মাটি কাটছেন। কেটে নেওয়া মাটি ট্রাক্টর বা ট্রলিতে করে কাছের ইটভাটায় পাঠানো হচ্ছে। এক্সক্যাভেটর দিয়ে আবাদি জমির টপ সয়েল কাটতে দেখা গেছে বিভিন্ন স্থানে। আলাপকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তারা কাজ করছে। এসব মাটি ব্যবসায়ীরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
চৌমুহনী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে সোনাই নদীর পাড় কেটে একটি প্রভাবশালী মহল বিক্রি করে দিচ্ছে। প্রশাসনের নীরবতায় ফসলি জমি ও নদী পাড়ের মাটি কেটে পাচারের হিড়িক পড়েছে এ অঞ্চলে। রাতের আঁধারে অসাধু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে এসব স্থানের মাটি কেটে পাচার করছে অবৈধ ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে জমি ভরাটের কাজে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে আঞ্চলিক সড়ক, সেতু, তিন ফসলি জমিসহ আশপাশের পরিবেশ। তবে এসব ঘটনায় নীরব রয়েছে প্রশাসন।
কাশিমনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নূর মুহাম্মদ জানান, আমরা অভিযোগ পেলেই অভিযানে যাচ্ছি। স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুমে বন্ধ থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে ধানিজমির মাটি কাটা হচ্ছে। এলাকার কৃষকরা জমির উর্বরতা শক্তির ক্ষতির দিক চিন্তা না করে সাময়িক লাভের আশায় মাটি বিক্রি করছেন। নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক মাটি ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের দোষ কী। কারো ফসলি জমির মাটি তো জোর করে কাটছি না। কৃষকরা মাটি বিক্রি করে বলেই তো নগদ টাকায় ন্যায্য দাম দিয়ে মাটি কিনে বিক্রি করি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজীব সরকার বলেন, কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় পুষ্টি উপাদান কমে গিয়ে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি না করার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ বিন কাশেম বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..