ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি:
ঠাকুরগাঁও জেলায় আলুর বাম্পার ফলনের আশা দেখা দিলেও দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকেরা।আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যেই আলু উত্তোলন শুরু হবে। আলুর গাছ ভালো থাকায় কৃষকরা বাম্পার ফলনের আশা করছেন। তবে বর্তমান বাজারে আলুর দাম নিম্নমুখী হওয়ায় কৃষকদের মাঝে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেলায় ৩১ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছিল। দাম ভালো পাওয়ার আশায় এবছর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আলুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৩ হাজার হেক্টর, তবে আবাদ হয়েছে ৩৯ হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে।
রানীশংকৈল উপজেলাতেই এবার ১৩ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, যা জেলার সর্বোচ্চ। কৃষকরা জমি পরিচর্যা ও সার প্রয়োগে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর গাছে কোনো বড় রোগবালাই দেখা যায়নি, ফলে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবিঘা আলুর আবাদে এবার ৭০-৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলন হচ্ছে প্রতি বিঘায় ১০০ থেকে ১২০ মণ। তবে আলুর বর্তমান বাজার মূল্য খুচরা পর্যায়ে ৮ থেকে ১২ টাকা প্রতি কেজি হওয়ায় কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
ঢোলরহাট এলাকার আলম মেম্বার জানান, “আমি ৫০ বিঘা জমিতে আলু আবাদ করেছি। গতবার কোল্ড স্টোরে আলু রেখে ভালো দাম পেয়েছিলাম, তবে এবার খরচ বেশি হওয়ায় লাভের আশা কম। দাম যদি এমনই থাকে, তাহলে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।”
ঝাড়গাও এলাকার এলাহী নামে এক কৃষক জানান, “আমি গতবার ১২ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলাম। এবার ৪৫ বিঘায় চাষ করেছি। তবে উৎপাদন খরচ বেড়েছে, কোল্ড স্টোরের ভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমান বাজারে আলুর দাম যেভাবে কম, তাতে এবার পথে বসার আশঙ্কা করছি।”
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করছেন। কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আলু আবাদ হয়েছে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের একজন কর্মকর্তা জানান, “আমরা কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করছি। এবার আলুর বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে বাজার দরের ব্যাপারে আমরা চিন্তিত। এটা সরকারের নীতিগত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।”
কৃষকরা আশা করছেন, সরকার আলুর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বাজার ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ করবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকে রক্ষা পেলে এবং কোল্ড স্টোরের অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করা গেলে চাষিরা লাভবান হতে পারবেন।
এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা—আলু উত্তোলনের পর প্রকৃত চিত্র সামনে আসবে। তবে মাঠে আলুর সবুজ গাছের সারি কৃষকদের আশার আলো দেখালেও বাজার দরের অনিশ্চয়তা সেই আলোকে ম্লান করছে বলে অভিযোগ জেলার কৃষকদের।
এ জাতীয় আরো খবর..