* কম্পিউটার দোকানী থেকে বাবুল বনে যায় আ'লীগের প্রভাবশালী ঠিকাদার
* রাজনৈতিক পরিচয় পরিবর্তন: শিবির → আওয়ামী লীগ → বিএনপি।
* ফ্যাসিস্ট পূর্ণবাসনের সুযোগ নেই- জেলা বিএনপি'র আহ্বায়ক বাহার।
ফেনী ব্যুরোঃ
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ১নং চরমজলিশপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র কর্মীসভায় বিতর্কিত ব্যক্তি ফজলুল হক বাবলু'র উপস্থিতি ঘিরে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফজলুল হক বাবলু অতীতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিভিন্ন প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধিদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি ফেনী সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শুসেন চন্দ্র শীলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে এলজিইডির বেশিরভাগ মেগা প্রকল্পের ঠিকাদারি এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন । অভিযোগ রয়েছে, ফেনীর পলাতক গডফাদার নিজাম হাজারীর কাছেও ১০ শতাংশ কমিশন দিয়ে ভাগিয়ে নিতেন শতকোটি টাকার টেন্ডার।
এলাকায় ছাত্রজীবনের শুরুর দিকে রাজনৈতিকভাবে ফজলুল হক বাবলু ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের দাবি।
পরবর্তীতে আ'লীগের ঘনিষ্ঠ হয়ে ফেনীতে এসে জায়গা-জমি, ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যস্থতার কাজ করেন। এরপর তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতার সাথে সক্ষতা গড়ে, শুরু করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত পাথর, বালু সহ বিভিন্ন মালামাল বিক্রয় । এক পর্যায়ে ঠিকাদারদের সাথে চলতে চলতে নিজের নামের সাথে প্রোপাইটার ব্যবহার করে শুরু করে "হক ট্রেডার্স " নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দাপ্তরিক প্রধানদের ম্যানেজ ও আ'লীগ নেতাদের সাথে ভাগ- বাটোয়ারায় ব্যবসা ও ঠিকাদারি কাজে ধীরে ধীরে প্রভাব বাড়ান তিনি। এলজিইডি, সড়ক বিভাগ ও গণপূর্ত'সহ প্রায় সকল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে শুরু করে প্রধান প্রকৌশলী পর্যন্ত গড়ে তুলে তার আধিপত্য। এরপর'ই ১০/১৫ বছরের ব্যবধানে কম্পিউটার দোকানী থেকে বাবুল বনে যায় জেলার আ'লীগ সমর্থিত প্রভাবশালী ঠিকাদার।
সম্প্রতি আবার নিজ এলাকা সোনাগাজীর ১ নং চরমজলিশপুর ইউনিয়নে বিএনপি’র কর্মীসভার মঞ্চে বাবলু'কে দেখা যাওয়ায় দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম নিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শুরু হয়েছে তুমুল সমালোচনা। দায়িত্বশীল নেতারা ফের বিতর্কিত বাবলু'কে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানালে দল থেকে অব্যাহতি নেওয়ার হুমকি দিয়ে স্ট্যাটাস দেন তৃনমূলের অনেক নেতাই।
স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, বাবলু এখন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগও শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। সমৃদ্ধ ঠিকাদার হওয়ায় টাকা ছড়ানোর মাধ্যমে তিনি জেলা-উপজেলার অনেক সিনিয়র নেতাকে ম্যানেজ করার অভিযোগও উঠেছে।
এই বিষয়ে চরমজলিশপুর ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, “যিনি বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পুরো সময়জুড়ে নিজাম হাজারীর কাছ থেকে কমিশনের মাধ্যমে ঠিকাদারি কাজ ভাগিয়ে নিতেন, তিনিই আজ বিএনপি নেতা পরিচয়ে মঞ্চে বসছেন—এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
তিনি আরও বলেন,“স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অবৈধ এমপির সুবিধাভোগী হয়ে যিনি ব্যবসা করেছেন, তাকে এখন বিএনপির নেতা বানানো হচ্ছে। এমন বেঈমানি ত্যাগী কর্মীরা কখনো মেনে নেবে না।”
ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আরিফ মিয়াজী বলেন, “ইউনিয়ন বিএনপি’র কর্মীসভায় ফজলুল হক বাবলু মাশআল্লাহ ভালো চেয়ার পেয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো—তিনি বিএনপির জন্য কী করেছেন? যারা মামলা-হামলায় জেল খেটেছে, তাদের কয়জনের খোঁজ নিয়েছেন?”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “সব সময় দেখা গেছে, তিনি আওয়ামী লীগের লোকজনের সঙ্গে চলাফেরা করেছেন, এমনকি তাদের আর্থিক সহযোগিতাও করেছেন। অথচ সেই আওয়ামী লীগই আমাদের ওপর মামলা দিয়ে নির্যাতন চালিয়েছে। এখন শুনছি, কর্মসূচির খরচও তিনি দিয়েছেন। দলের দুর্দিনে তিনি কোথায় ছিলেন?”
এছাড়াও স্থানীয় সেচ্ছাসেবক দল নেতা শোয়াইব হোসেন সুমন, যুবদল নেতা কামরুল ইসলাম সুমন, বিএনপি নেতা আনোয়ার'সহ প্রায় অর্ধ-শতাধিক নেতাকর্মী বিতর্কিত এই বাবলু'র দল পরিবর্তনে আবাসের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে পোস্ট দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের একাধিক নেতা বলেন,“দলের প্রকৃত ত্যাগী কর্মীরা যখন অবমূল্যায়িত হচ্ছে, তখন বিতর্কিত লোকেরা সুযোগ পাচ্ছে। এতে তৃণমূলে হতাশা তৈরি হচ্ছে।”
এই ঘটনায় ফেনী জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার বলেন, “ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সঙ্গে জড়িত কেউ যদি বিএনপিতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে, তারেক রহমানের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে—তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও ঠিকাদার ফজলুল হক বাবলু’র সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ জাতীয় আরো খবর..