নিজস্ব প্রতিবেদক, শরীয়তপুর:
নিজের ছোট্ট একটি ঘর হবে—এমন স্বপ্ন নিয়ে জীবনের সব সঞ্চয় তুলে দিয়েছিলেন আঞ্জুমান আক্তার। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের পরাসর্দি গ্রামে জমি কেনা-বেচাকে কেন্দ্র করে প্রায় ৪০ লাখ টাকার প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় নারী রোকেয়া বেগম ও তার স্বামী মিন্টু ফরাজির বিরুদ্ধে।
এই ঘটনায় ভুক্তভোগী আঞ্জুমান আক্তার বাদী হয়ে রোকেয়া বেগম, মিন্টু ফরাজি, লিটন ফরাজি ও বেলায়েত সরদারকে আসামি করে আংগারিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ১০ আগস্ট সেনা সদস্য এমদাদুল হকের স্ত্রী আঞ্জুমান আক্তারের কাছ থেকে রোকেয়া বেগম জমি বিক্রির অগ্রিম বাবদ প্রথমে ২৫ লাখ টাকা নেন। পরে দুই দফায় আরও ১৫ লাখ টাকা নেন তিনি। নির্ধারিত সময়ে দলিল রেজিস্ট্রি করার কথা থাকলেও নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন রোকেয়া ও তার স্বামী মিন্টু ফরাজি।
অভিযোগ রয়েছে, রোকেয়া ও মিন্টু ওই টাকা দিয়ে দুটি ট্রাক ক্রয় করেন। কিন্তু তিন বছর কেটে গেলেও না জমি, না টাকা—কিছুই ফেরত পাননি আঞ্জুমান আক্তার। একাধিকবার স্থানীয় সালিশ ও আংগারিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে মীমাংসার চেষ্টা করেও তিনি কোনো প্রতিকার পাননি।
ভুক্তভোগী আঞ্জুমান আক্তার বলেন,
“আমার স্বামী ও আমি সারা জীবনের কষ্টের টাকা দিয়ে নিজেদের একটা জমি কিনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু রোকেয়া এখনো না জমি দিচ্ছে, না টাকাও ফেরত দিচ্ছে। তিন বছর ধরে ঘুরছি—কেউ কোনো সাহায্য করছে না। উল্টো টাকা চাইলে হুমকি দিচ্ছে।”
তার চাচা আল আমিন মুন্সি বলেন,
“আমরা বিষয়টি স্থানীয় পর্যায়ে সালিশে দিয়েছিলাম, কিন্তু কোনো সমাধান পাইনি। পরে থানায় লিখিত অভিযোগ দিই। আমরা চাই প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে আমার ভাতিজির টাকা ফেরত দিক।”
শুধু আঞ্জুমান আক্তার নন, একই এলাকার আরও অন্তত ১৫ জন রোকেয়া বেগম ও তার স্বামীর প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে রিনা বেগম, লাকি আক্তার, ইয়ারুম বেগম ও আলামিন মুন্সি উল্লেখযোগ্য।
রিনা বেগম বলেন,
“আমার স্বামী প্রবাসে। আমাকে জমি দেওয়ার কথা বলে প্রায় ১২ লাখ টাকা নিয়েছে রোকেয়া বেগম। কিন্তু এখন টাকা ফেরত চাইলে উল্টো ভয় দেখায়।”
ইয়ারুম বেগম জানান,
“রোকেয়া আমার কাছ থেকে কয়েক ভরি গহনা ধার নিয়েছিল, কিন্তু এখন ফেরত দিচ্ছে না। নানা অজুহাতে দেরি করছে।”
লাকি আক্তার বলেন,
“রোকেয়া আমার আত্মীয়া। দুই বছর আগে সে বিপদে আছে বলে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিল। কিন্তু আজও ফেরত দেয়নি, বরং এখন উল্টো গালাগালি ও হুমকি দিচ্ছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোকেয়া বেগমের বিরুদ্ধে এর আগেও অনুরূপ প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে তিনি ও তার স্বামী মিন্টু ফরাজি গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে রোকেয়া বেগমের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনেও একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
আংগারিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিকাশ চন্দ্র চৌধুরী বলেন,
“লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর দাবি—দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে তাদের কষ্টার্জিত টাকা ফেরত দিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।