×
  • প্রকাশিত : ২০২৫-১১-০২
  • ২০ বার পঠিত

খন্দকার মোহাম্মাদ আলী, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : 



বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের তামাই (পশ্চিমপাড়া) গ্রামের সামছুল হকের কিশোরী মেয়ে মরিয়ম খাতুনের  (১৪) মৃত্যুর রহস্য নিয়ে ধোঁয়াশায় আটকিয়ে আছে তদন্তের আইনি জটিলতা। এটি পরিকল্পিত হত্যা, নাকি অপরিণত বয়সে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ফুসলিয়ে নিজ বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে অনৈতিকভাবে অভিভাবকবিহীন বিয়ের গোপন নাটক মঞ্চস্থ করে বাল্যবিবাহ সম্পাদন করে তাকে হত্যা করা হয়েছে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।

এই বিয়ের সাথে সম্পৃক্ত আসামিরা হলো আব্দুর রহমান, ইসমাইল, রাসেল,শাহিন ওরফে বুদ্দু, সাব্বির হোসেন ও তানিয়া খাতুন সহ  দাওয়াতি মেহমানদের যোগসাজশে যৌন লালসা মিটিয়ে স্বামী নামধারী বখাটে যুবক তামাই কুয়েতপাড়ার মৃত (জামাই) বুদ্দু শেখের ছেলে আব্দুর রহমান শেখ তার বসতঘরে মরিয়মকে হত্যা করে সকালে আত্মহত্যার নাটক মঞ্চস্থ করেছে—এমন আশঙ্কা করছেন নিহত মরিয়মের স্বজনেরা।

এই হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের দাবিতে মৃত মরিয়মের মা সেলিনা বেগম বেলকুচি থানার মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা না পেয়ে আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার পিটিশন মামলা নং ১৩৫/২০২১(বেল) ধারা ৩০২/৩৪ দ:বি: ।

আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর গোলাম কিবরিয়া তামাই পশ্চিমপাড়া কবরস্থান থেকে মরিয়মের লাশ যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় উত্তোলন করে পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন।

দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর অবশেষে গত ২৪ শে ডিসেম্বর ২০২৩  ইং  তারিখে সিরাজগঞ্জ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।


 এ বিষয়ে  তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর গোলাম কিবরিয়া , রাজশাহী সিআইডি হতে ফরেনসিক রিপোর্ট সংগ্রহ করেন যদিও  তিনি আদালতের  কাছে ডি এন এ আলামত পরিক্ষার অনুমতি নিলেও অদৃশ্য কারণে তা পরিক্ষা করানো হয়নি , এছাড়া অপ্রয়োজনীয় আলামত পরিক্ষা করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

এ বেপারে  মামলার বাদী পক্ষের অভিযোগ—উক্ত রিপোর্টটিও পূর্বের রিপোর্টের মতো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও টাকার বিনিময়ে আসামিপক্ষ হাছিল করেছে।

এ বিষয়ে বাদী সেলিনা বেগম পুনরায় তদন্তের জন্য আদালতে ‘নারাজি’ দাখিল করলে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। সেখানেও আসামিরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পিবিআইয়ের প্রতিবেদনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঘটনার সত্যতা না দেখিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা । এতে বাদী ও সচেতন এলাকাবাসী গভীর হতাশায় ভেঙে পড়েন।

বাদী সেলিনা বেগম জানান,“আমার মেয়ে মরিয়ম খাতুন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। আমার স্বপ্ন ছিল তাকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। কিন্তু আমাদের অজান্তে তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে এক কিশোরগ্যংয়ের প্ররোচনায় তামাই কুয়েতপাড়ার মৃত (জামাই) বুদ্দুর ছেলে আব্দুর রহমান উধাও করে নিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও না পেয়ে থানায় অভিযোগ করার প্রক্রিয়া চলছিল। এমতাবস্থায় লোকমুখে শুনতে পাই, মরিয়মকে বিয়ে করেছে আব্দুর রহমান। এই বিয়েতে কারা জড়িত ছিল, আমরা কিছুই জানি না।দুঃখভারাক্রান্ত মনে অপেক্ষা করতে থাকি, হয়তো আব্দুর রহমানের পরিবার সামাজিকভাবে বিষয়টি মীমাংসা করবে। কিন্তু গত ১৭ই অক্টোবর ২০২১  ইং তারিখে লোকমুখে শুনি, আমার মেয়ে মরিয়মকে মেরে ফেলা হয়েছে—তার লাশ আব্দুর রহমানের বসতঘরের মেঝেতে পড়ে আছে।”

বিষয়টি শুনে স্থানীয় লোকজন নিয়ে আমি ও আমার স্বামী সামছুল হক প্রতিবেশি গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আব্দুর রহমানের বাড়িতে যাই এবং তার ঘরের মেঝেতে মেয়ের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখি। এ সময় সংবাদ পেয়ে বেলকুচি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশের  সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। আমরা নিজেরাও দেখতে পাই—মরিয়মের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল, আর ঘরের মেঝের রক্তের দাগ ভোরেই ধুয়ে ফেলা হয়েছে।

বেলকুচি থানা পুলিশের সঙ্গে সুবিধাবাদী একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে এবং প্রকৃত অপরাধীদের রক্ষা করে হত্যাকে আত্মহত্যা হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এমনকি হাসপাতালের ময়নাতদন্ত রিপোর্টটিও টাকার বিনিময়ে হাছিল করেছে বলে অভিযোগ ওঠে।



এ বিষয়ে এলাকাবাসী মরিয়ম হত্যার বিচারের দাবিতে শত শত লোক মানববন্ধনে অংশ নিয়ে আসামিদের ফাঁসির দাবি জানান।মরিয়মের পিতা, ভ্রাম্যমাণ ছেঁড়া পরেটা  বিক্রেতা দরিদ্র ও অসহায় সামছুল হকের অভিযোগ—

“বেলকুচি থানা পুলিশ আমাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে মরিয়ম হত্যার আসামিদের গ্রেফতারের কথা বলে থানায় আত্মহত্যার একটি ইউডি মামলা রুজু করে। কিন্তু বিষয়টি আমাকে বুঝতে দেয়নি। আমার স্ত্রী সেলিনা বেগমের কাছ থেকেও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া হয়। পরে আদালত থেকে কাগজপত্র উঠিয়ে দেখি, হত্যার পরিবর্তে আত্মহত্যার ইউডি মামলা হয়েছে। এতে নিরাশ হয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরামর্শে পুনরায় আদালতে মামলা দায়ের করি। এর পর থেকে মামলাটি একের পর এক তদন্ত কর্মকর্তার কাছে ঘুরছে, কিন্তু প্রকৃত বিচার হচ্ছে না।তিনি আরও বলেন,“আমার মেয়ের অভিভাবক সেজে যারা অনৈতিকভাবে বাল্যবিবাহ সম্পাদন করেছে এবং হত্যার সহায়তা করেছে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে ন্যায়বিচার চাই।”



এলাকাবাসী মানববন্ধনে বলেন,“নাবালিকা মরিয়ম হত্যার আসামিরা দলীয় সুবিধাবাদীদের সহায়তায় থানা পুলিশ, পিবিআই ও ডিবি তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে একের পর এক একই ধাঁচের আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এতে আসামিরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।”তারা আরও বলেন, সমাজ ও বিচারব্যবস্থায় এমন জলজ্যান্ত অবক্ষয় চলতে থাকলে নাবালিকা মেয়েদের স্বপ্নময় ভবিষ্যৎ বখাটেদের হাতে এভাবেই ঝরে যাবে প্রাণ। আর তাদের পিতা-মাতারা আদালতের বারান্দায় চোখের জলে বিচারের আশায় কেঁদে ফিরবেন।

অবশেষে, মেয়ের কবরের মাটির স্পর্শে অদৃশ্য আত্মার নির্মম অভিশাপের আত্মচিৎকারের প্রতিধ্বনি একদিন পৌঁছে যাবে আরশে আজিমে।প্রকৃত অপরাধীদের বিচার—কোন না কোন দিন, কোনো না কোনো বিচারকের এজলাসে হবেই হবে—এমন প্রত্যাশা মরিয়মের পরিবারের ও এলাকাবাসীর।


নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
lube
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat