×
  • প্রকাশিত : ২০২৫-১১-০৩
  • ১৯ বার পঠিত
ডেস্ক নিউজ :

রাজধানী ঢাকাকে বাসযোগ্য করার যে উদ্দেশ্য নিয়ে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রণয়ন করা হয়েছে, তা ভেস্তে যেতে বসেছে। বিদ্যমান ড্যাপে (২০২২-৩৫) ভবনের উচ্চতা ও ফ্ল্যাটের সংখ্যা আরেক দফা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে অধিকাংশ জায়গায় বাসযোগ্যতার মান ঠিক রাখা সম্ভব হবে না। পাশাপাশি ঢাকা নগরী আরও জনবহুল হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

ড্যাপ প্রণয়নকারীদের যুক্তি ছিল, নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত না করে শুধু ভবনের উচ্চতা বাড়িয়ে ভারসাম্যহীন জনবসতি গড়ে তুললে ঢাকা মহানগরী আরও অবাসযোগ্য হয়ে যাবে। ভবন তৈরির ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ জায়গা উন্মুক্ত রাখারও নির্দেশনা ছিল। ফ্লোর এরিয়া র‍্যাশিও (ফার) কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গত সরকারের আমলে আবাসন ও ফ্ল্যাট ব্যবসায়ীদের চাপে তা সংশোধন করে কিছুটা ফার বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি ড্যাপ রিভিউ কমিটি আবারও সংশোধন করে ভবনের উচ্চতা ও ফ্ল্যাটের সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম সমকালকে বলেন, জনগণের চাওয়াটাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে আছে ভূমি মালিক সমিতি, রিহ্যাব, পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা, বাপা ও কারিগরি দিক থেকে দক্ষ ব্যক্তিদের সংগঠনগুলো। রাজউকের একার সিদ্ধান্তেও কিছু হয়নি। 

তবে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মুহাম্মদ খান সমকালকে বলেন, বাংলাদেশ সব সম্ভবের দেশ। ড্যাপ সংশোধনের পেছনে যে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি, এই গ্যারান্টি কে দেবে? তা না হলে কার স্বার্থে এটা করা হলো সেটা প্রশ্ন।

ড্যাপ প্রণয়নের পর থেকেই আবাসন ও ফ্ল্যাট ব্যবসায়ীদের চাপে পড়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ড্যাপে অনেক পরিবর্তন আনা হয়। প্রতিটি ভবনের ফার কমিয়ে দেওয়া হয়। এতে নগর পরিকল্পনাবিদরা সন্তোষ প্রকাশ করলেও ক্ষুব্ধ হন আবাসন ব্যবসায়ী ও জমি মালিকরা। গত সরকারের আমলে তৎকালীন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের সময় ফারে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়। এরপরও আবাসন ব্যবসায়ী ও ভূমি মালিকরা খুশি ছিলেন না। গত ২২ অক্টোবর ড্যাপ রিভিউ কমিটি আরও ছাড় দেয়। ২০ ফুট প্রশস্ত থাকা সড়কের পাশের ভবনের ফার বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আগে ১৭৫টি জনঘনত্ব ব্লক নির্ধারণ করা ছিল, এতে ছাড় দিয়ে ৬৮টি করা হয়। তবে এখনও গেজেট হয়নি।

ফার বাড়ানোয় বাড়বে বহুতল ভবন
বিদ্যমান ড্যাপে মিরপুর এলাকায় ফার ২ দশমিক ৮। কোনো জমির আয়তন এক হাজার বর্গফুট হলে সেখানে দুই হাজার ৮০০ বর্গফুট আয়তনের অবকাঠমো তৈরি করা যেত। সেটা সংশোধন করে ফার করা হয়েছে ৩ দশমিক ৪। ফলে এখন জমি মালিক একই আয়তনের জায়গায় তিন হাজার ৪০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্লোর পাবেন। এতে ভবনের আশপাশের উন্মুক্ত স্থানের পরিমাণ কমে যাবে। 

ড্যাপের ২৩ নম্বর বিধিতে সবুজ বেষ্টনী রাখার ব্যাপারেও এবার একটি বিশেষ কৌশল নেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০ কাঠা বা তার চেয়ে বেশি আয়তনের প্লটে ১০ শতাংশ জায়গা সবুজায়নের 

জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এর বাইরে যদি আগে 
থেকেই পুরোনো বা মোটা গাছ থাকে, তাহলে আরও বাড়তি সুযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। 

আবাসন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ইম্পেরিয়াল রিয়েল এস্টেটের হেড অব অপারেশন মঞ্জুরুল আলম মিজান সমকালকে বলেন, এই নিয়মে খুব একটা লাভ হবে না। কারণ এখন ২০ কাঠার আবাসিক প্লট কার্যত নেই। এমনকি রাজউক উত্তরা, পূর্বাচল, ঝিলমিলে ১০ কাঠার বেশি আয়তনের প্লট নেই। কেবল প্রাতিষ্ঠানিক বা বাণিজ্যিক প্লট আছে ২০ কাঠা বা তার ওপরে। কাজেই সবুজায়নের যে কথা বলা হচ্ছে, সেটা খুব একটা কাজে আসবে না।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ মেহেদী আহসান সমকালকে বলেন, ঢাকা মহানগরীর সুষম উন্নয়ন এবং বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য বিকেন্দ্রীকরণ কর্মকৌশল অতি জরুরি, যা ফার বৃদ্ধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফার বৃদ্ধির মাধ্যমে বহুতল ভবনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এতে জনঘনত্ব বাড়বে। সে অনুযায়ী মহানগরীর অবকাঠামো এবং পরিষেবার সুযোগ আছে কি নাই সে বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হয়নি। 

এ প্রসঙ্গে রিহ্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, আগে যেখানে ৯ তলা ভবন উঠত, ড্যাপে সেটাকে চার-পাঁচতলায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এতে আবাসন ব্যবসা গতি হারিয়েছিল। তারা এখন কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

প্রতি এলাকায়ই বেড়েছে ফার
দক্ষিণখানে ফার ২ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩ দশমিক ১। শেওড়াপাড়ায় করা হয়েছে ২ থেকে ৩, মহখালীতে ২ দশমিক ২ থেকে ৩ দশমিক ৩, মোহাম্মদপুরে ২ দশমিক ৭ থেকে ৩ দশমিক ৪, পুরান ঢাকায় ২ দশমিক ৬ থেকে ৩ দশমিক ৩, খিলগাঁও ২ থেকে ৩ দশমিক ৪ করা হয়েছে। টঙ্গীতে ফার ২ দশমিক ৪ থেকে বাড়িয়ে ৩ দশমিক ২, রূপগঞ্জে ২ থেকে ৩ দশমিক ২ করা হয়েছে। প্রতি এলাকাতেই এভাবে ফার বাড়ানো হয়েছে। 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
lube
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat