×
সদ্য প্রাপ্ত:
মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণ পরিশোধের দাবি সিলেটে দুই ট্রাক সাদাপাথর জব্দ, চালকদের দেড় লাখ টাকা জরিমানা হবিগঞ্জে জামায়াত প্রার্থীর গাড়িতে দুর্বৃত্তদের হামলা ঢাকার ফ্লাইট নামছে চট্টগ্রাম-কলকাতায় মক্কায় এক সপ্তাহে ১৩.৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ দুটি পবিত্র মসজিদ পরিদর্শন করেছেন শিক্ষকদের ‘মার্চ টু সচিবালয়’ শুরু, পুলিশের বাধা মিরপুরে ভয়াবহ আগুনে ৯ জনের মৃত্যু শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলায় পাচারকালে ৩৮০ বস্তা সরকারি চাল জব্দ রূপগঞ্জে ১৩ বছর বয়সী শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে বৃদ্ধ গ্রেফতার বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী ও লেখক শহিদুল আলম কে আটোক ইসরায়েলি বাহিনীর
  • প্রকাশিত : ২০২৩-০৮-২০
  • ১১৫ বার পঠিত
মাছ-মাংসের দাম বেশি হওয়ায় আগে থেকেই তা খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন এসব মানুষ। এখন তাঁদের পুষ্টির বড় উৎস ডিমেও টান লেগেছে।

গাজীপুরের তিন সড়ক এলাকায় রাস্তার পাশে একটি ভাসমান ভাতের হোটেলে গত বুধবার দুপুরে খাবার খাচ্ছিলেন পোশাকশ্রমিক আবদুল আজিজ। স্পেরো নামের একটি কারখানায় কাজ করেন তিনি। আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুপুরে বিরতির সময় বাড়িতে গেলে গাড়িভাড়া লাগে ২০ টাকা।

কিন্তু বিশ্রাম নেওয়ার সময় থাকে না। তাই বেশির ভাগ সময় দুপুরের খাবার হোটেলে খেয়ে নিই। বছর দুই আগে ভাতের সঙ্গে ডিম আর ডাল খেলে লাগত ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। এখন এক প্লেট ভাত আর ডিম খেলেই লাগে ৫০ টাকা। সঙ্গে অন্য কিছু নিলে লাগে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। মাছ আর মাংসের কথা বাদই দিলাম।’

বাজারে পাল্লা দিয়ে একের পর এক বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী যাত্রায় সর্বশেষ সংযোজন ডিম। লাগামছাড়া দামের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ মাছ-মাংস খাওয়া আগেই কমিয়ে দিয়েছেন। প্রাণিজ আমিষ বলতে ডিমই ছিল তাঁদের ভরসা। এখন ডিমের দামও ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে এখন প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৫০ টাকার নিচে নেই। 

বেশি দামের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষেরা মাংস ও মাছ কম খাচ্ছেন। এখন মূল্যবৃদ্ধির কারণে ডিম খাওয়াও কমিয়ে দেওয়াটা উদ্বেগজনক। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে তা বড় ধরনের পুষ্টিঘাটতির কারণ হবে।
ফারজানা আনজিন, উপপ্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা, ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতাল

তাতে নিম্ন আয় ও শ্রমজীবী মানুষ ডিম খাওয়াও কমাতে শুরু করেছেন। হোটেল-রেস্তোরাঁয় এখন একটি ডিমভাজি বিক্রি হচ্ছে গড়ে ২৫ টাকা। আর ডিমের তরকারি প্রতি বাটি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল হয়ে আছে। তাতে শুধু গাজীপুরের মতো শ্রমিক-নির্ভর এলাকায় নয়, রাজধানীর নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার কষ্ট আগের চেয়ে আরও বেড়েছে।

গতকাল শনিবার রাজধানীর মালিবাগ, খিলগাঁও ও রামপুরা এলাকা ঘুরে ও একাধিক নিম্ন আয়ের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেও জানা যায়, সংসার চালাতে তাদের হিমশিম অবস্থা। মালিবাগ বাজারের পান বিক্রেতা মো. সোহরাব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাঁচজনের পরিবারে আমরা আগে প্রতি শুক্রবার মাংস খেতাম। এখন মাসে দুইবার মাংস খাই। মাছের দামও বাড়তি, তাতে মাছ খাওয়াও কমাতে হয়েছে। আর ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন শুধু ছোট ছেলের জন্য ডিম কিনি। আগে প্রতিজন একটি করে ডিম খেতাম। দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন একটি ডিম দুজনে ভাগ করে খাই।’

ডিমের বাড়তি দামের কারণে মানুষ যে এখন ডিম খাওয়া কমিয়ে দিচ্ছেন, তা বোঝা যায় ভাতের হোটেলের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে। গাজীপুরের কড্ডা এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী লিটন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর হোটেলে আগে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০টি ডিম বিক্রি হতো। কিন্তু দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন দিনে ২০ থেকে ৩০টি ডিম বিক্রি হয়। কারখানার শ্রমিক ও রিকশাচালকেরা বেশি ডিম খেতেন। এখন শাক, ভর্তা আর ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে চলে যান।

বাজার পরিস্থিতির ওপর সরকার নজর রাখছে উল্লেখ করে গাজীপুর জেলা বাজার কর্মকর্তা আবদুস সালাম বলেন, ‘আমরা নিয়মিত ডিমের বাজার তদারক করছি। কেউ অস্থিরতা তৈরি করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি বিপদে পড়েছেন নির্দিষ্ট আয়ের মানুষও। তাঁরা যে আয় করছেন, তা দিয়ে তাঁদের সংসার চলে না। রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার বেসরকারি চাকরিজীবী হাসিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় এসে ২০ হাজার টাকা আয় করে মাস শেষে আমি ১০ হাজার টাকাও বাড়িতে পাঠাতে পারি না। বেতনের বড় অংশ থাকা-খাওয়ায় চলে যায়। সব মিলিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।’

ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতালের উপপ্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা ফারজানা আনজিন বলেন, বিভিন্ন উৎসের মধ্যে ডিমই সহজলভ্য আদর্শ প্রোটিন। মানুষের শরীরও এটি ভালোভাবে শোষণ করতে পারে। বেশি দামের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষেরা মাংস ও মাছ কম খাচ্ছেন। এখন মূল্যবৃদ্ধির কারণে ডিম খাওয়াও কমিয়ে দেওয়াটা উদ্বেগজনক। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে তা বড় ধরনের পুষ্টিঘাটতির কারণ হবে। তাতে মানুষের চিকিৎসার ব্যয় বাড়বে।

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর রহিম টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিক মো. আক্তারুল ইসলাম বলেন, ‘কারখানায় এখন ওভারটাইম হয় না। তাই বেশি আয় করারও সুযোগ নেই। যা আয় করি, তা দিয়ে সবজি, ডাল দিয়ে কোনোভাবে তিন বেলা খাওয়া যায়। আগে মুরগির মাংস খেতাম মাসে দুই-তিন দিন। এখন সেটি খাই না বললেই চলে।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গরিব মানুষকে চালসহ খাদ্যপণ্য কিনতেই আয়ের বেশির ভাগ অর্থ খরচ করতে হয়। এর মধ্যে চাল কিনতেই আয়ের চার ভাগের এক ভাগ খরচ হয়। মাছ-মাংস কেনাসহ অন্যান্য খরচ সামলে নিতে হয় নির্দিষ্ট আয়ের মধ্যে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
lube
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat