রহমত আল আকাশ, দিনাজপুর
২০ বছর পর উত্তরের জনপদ দিনাজপুরে জামাতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন। সকাল থেকে হাজার হাজার নেতা কর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন ও খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে যোগ দেন এ কর্মী সম্মেলনে। কর্মী সম্মেলনে যোগ দিতে সকাল থেকেই দিনাজপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার নেতাকর্মীদের ঢল নামে। বেলা ৯টার মধ্যে বড়মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে উঠে আসে বিগত সরকারের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা।
বিগত সরকার বলতেন, গনতন্ত্রের দরকার নেই উন্নয়ন হলেই চলবে, কিন্তু উন্নয়নের নামে রডের বদলে বাঁশ উপহার দিয়েছে তারা। যারা দেশপ্রেমিক তারা কখনো দেশের জনগণের টাকা চুরি করে না। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা চুরি করে বিদেশে পাঠিয়েছে মনে মন্তব্য করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, খুনের বিচার না হলে খুনের সংস্কৃতি বন্ধ হবে না, চাঁদাবাজের বিচার না হলে চাঁদাবাজি বন্ধ হবে না লুটপাটের বিচার না হলে লুটপাট বন্ধ হবে না, ঘুষখোরের বিচার না হলে ঘুষ বন্ধ হবে না সুতরাং এ সকল অন্যায়ের বিচার হতে হবে। আমরা চাই ন্যায় বিচারের মাধ্যমে যার যেটা পাওনা সে যেন সেটা পেয়ে যায়।
তরুণদের উদ্দেশ্য ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আগামির বাংলাদেশ তরুণদের বাংলাদের। আমার প্রিয় বাংলাদেশ একটি মানবিক বাংলাদেশ। মানবিক বাংলাদেশ গড়ার জন্যই আমাদের সংগ্রাম। এ সংগ্রামে আমরা আপনাদের পাশে চাই, সাথে চাই।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আমীর ডা. শফিকুর রহমান দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে শান্তি সাম্য ও মানবিকতার দাওয়াত নিয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমরা একটি মানবিক ও কল্যাণ গড়ে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যে সমাজে সকল ধর্মের মানুষ একসাথে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
বিচার বিভাগ প্রসঙ্গে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সরকার বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল, বিচার ব্যবস্থাকে তারা নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। বিচারপতিরা দম্ভ করে বলতো, আমরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। কিন্তু তারা শপথবদ্ধ নয়, তারা ছিল শপথভঙ্গকারি রাজনীতিবিদ। আল্লাহর বিধানের বাইরে কেউ ন্যায় বিচার করতে পারবে না। দেশে যতটা ঘুম, খুন হয়েছে, ততটা ঘুম ও খুনের বিচার হতে হবে। আমরা চাই না বিনা বিচারে একজন মানুষকেও হত্যা করা হোক।
তিনি বলেন, দেশের যুবকরা আমাদের গর্ব ও অহংকার। তাদের কাছে আমরা ঋনি। তারা জীবন দিয়ে আমাদেরকে প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে।
তিনি বলেন, যেখানে অপকর্ম সেখানেই আওয়ামী লীগ। কোন অপকর্ম হলে তার দায় তারা জামায়াতের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। জামায়াতকে বিভিন্নভাবে দমন ও নিপিড়ন করেছে।
হিন্দুদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা নিজেদেরকে কখনো মাইনরিটি ভাববেন না। আপনারা এদেশের নাগরিক। সম্মান ও মর্যাদার সাথে বসবাস করার অধিকার সকল নাগরিকের রয়েছে।
নারীদের প্রসঙ্গ টেনে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার সব সময় নারীদের সম্পর্কে খারাপ ধারনা দিয়েছে। তারা বলেছে, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের ঘর থেকে বের হতে দিবে না। অথচ জামায়াত ক্ষমতায় গেলে মর্যাদা ও নিরাপত্তার মাধ্যমে নারীরা তাদের দায়িত্ব পালন করবে।
দিনাজপুর জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাদ্দিস ড. এনামুল হক'র সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শহীদ সুমন পাটোয়ারীর পিতা মোঃ ফারুক হোসেন।
কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ দেলোয়ার হোসেন।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামী রংপুর অঞ্চলের টিম সদস্য মাওলানা আব্দুল হাকিম, ঠাকুরগাঁও জেলা আমীর অধ্যক্ষ বেলাল উদ্দিন প্রধান, পঞ্চগড় জেলা আমির অধ্যাপক ইকবাল হোসাইন, দিনাজপুর জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য এ্যাড. মাহবুবুর রহমান ভুট্টো, খেলাফত মজলিস দিনাজপুর জেলা সভাপতি মাওলানা রেজাউল করিম,
হেফাজতে ইসলাম দিনাজপুর জেলা সেক্রেটারি মাওলানা জোবায়ের সাঈদ, ইসলামী ছাত্রশিবির দিনাজপুর শহর শাখার সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান, দিনাজপুর শহর জামায়াতের আমীর সিরাজুস সালেহীন, শহীদ রুদ্র সেন'র পিতা অধ্যাপক সুবীর কুমার সেন, অমুসলিম প্রতিনিধি অধ্যক্ষ শিশির কুমার সরকার, নিতাই চন্দ্র দেবনাথ প্রমূখ।
জামায়াতের এ কর্মী সম্মেলনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিচ্ছদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তাছাড়া জামায়াতের প্রায় ৫০০ সেচ্ছাসেবক কর্মী শহরের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে।
এ জাতীয় আরো খবর..