×
সদ্য প্রাপ্ত:
  • প্রকাশিত : ২০২৫-০২-০৩
  • ৫৩ বার পঠিত

মো: রিয়াজ স্টাফ রিপোর্টার 

 শেরপুরের গারো পাহাড়ের সীমান্তে নদী নালা, খাল বিল ঝর্ণা, ফসলি জমি,  জলাশয়, বন বিভাগের পাহাড় ওনদীর পাড় ভেঙে  নির্বিচারে চলছে বালু লুটের মহোৎসব। 

ফলে গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারিয়ে  জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হয়ে পরেছে। জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেষে অবস্থিত গারো পাহাড়ের  পাদদেশে  সৌন্দর্য্যের নীলাভূমি প্রাকৃতিক খনিজ ও বনজ সম্পদে ভরপুর শেরপুরের গারো পাহাড়। 

যে সৌন্দর্যকে ঘিরে এখানে  গড়ে উঠেছে ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্র, নালিতাবাড়ির মধুটিলা ইকোপার্ক ও পানিহাতা পর্যটন কেন্দ্র। এসব কেন্দ্রগুলোতে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে। পর্যটকদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠে গারো পাহাড়।  সৌন্দর্য  উপভোগ করতেই দর্শনার্থীদের এ আগমন। এসব কেন্দ্রগুলো থেকে সরকারের ঘরে আসে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব । কিন্তু এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলোর আসপাশের এলাকায় স্থানীয়  বালুদস্যুরা ভোগাই,চেল্লাখালি,মহারশি ও সোমেশ্বরী,কর্ণঝোড়া ও কালঘোষা নদীসহ বিভিন্ন স্থানে শতশত ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পরিবেশের ভারসাম্যের ক্ষতি সাধন করে অবাধে বালু লুটপাট করে আসছে।

 এতে সৌন্দর্য হারাচ্ছে পর্যটন কেন্দ্রগুলো। এতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যও  হুমকির সম্মুখীন।   এসব বালু লুটপাটের বিষয়টি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল। নদীর পাড় ফসলি জমি, বনবিভাগের  পাহাড় কেটে নির্বিচারে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা মূল্যের বালু লুটপাট করা হচ্ছে।  উত্তোলনকৃত বালু দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। বালুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায়  হাজার হাজার মানুষ এখন বালু লুটপাটে সাথে জরিত।  

বালু ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে প্রতিট্রাক বালু ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। গতবছর যে বালু বিক্রি করা হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায়। বর্তমানে বিক্রি করা হচ্ছে ৬০ হাজার টাকায়। বালুর দাম বৃদ্ধির কারন হিসেবে জানা গেছে, মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় নেত্রকোনার  দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীর বালু উত্তোলন বন্ধ থাকায় শেরপুরের গারো পাহাড়ের  বালুর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। অনুসন্ধানে জানা গেছে  গতকয়েক মাসে বালু লুটপাট করে গারো পাহাড়ের  অনেই কোটি প্রতি বনে গেছেন। 

স্থানীয়দের মতে   নদীগুলোর  ইজারাকৃত নির্ধারিত স্থানে এক দুই মাস বালু উত্তোলনের পর সেখানে আর বালু থাকে না। পরে  বালুখেকোরা  ভরবছর ইজারা বহির্ভূত এলাকায় বালু লুটপাট চালান এ অভিযোগ স্থানীয়বাসীন্দাদের । 

অভিযোগ রয়েছে বালুখেকোরা  কখনো প্রশাসনের যোগশাজসে আবার কখনো গায়ের জোরে দীর্ঘদিন ধরে দিনেরাতে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা মূল্যের বালু  লুটপাট  করে আসছে । সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে প্রত্যক্ষ  করা গেছে  বর্তমানে নাকুগাঁও স্থলবন্দর  থেকে শুরু করে কর্ণঝোড়া পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার  এলাকায় ও শেরপুর সদর, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী সদরসহ বিভিন্ন হাটবাজার গ্রামেগঞ্জে,পাড়া মহল্লায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে, বাড়ি বাড়িও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের সামনে বসানো হয়েছে  অবৈধ বালুর হাট। এসব স্থান থেকে প্রকাশ্যে বাধাহীনভাবে  বিক্রি করা হচ্ছে বালু। 

অভিযোগ রয়েছে, বালুদস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় বালু লুটপাটের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে বা প্রতিবাদ করতে সহস পান না। আবার কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের উপর নেমে আসে বালুদস্যুদের কালো থাবা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু লুটপাট প্রতিরোধে অভিযান করতে গিয়েও হিমসিম খেতে হচ্ছে প্রশাসনকে।  অভিযানে গিয়ে  আওয়ামী লীগের দোসর খেতাবে ভূষিত হয়ে নাকানিচুবানি খাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি ইউএনও ও এসিল্যান্ড। সাংবাদিকরাও রেহাই পাচ্ছেন না। পত্রিকায় লেখালেখি করতে গিয়ে  আওয়ামী লীগের সাংবাদিক খেতাবে ভূষিত হয়ে হুমকিধমকির শিকার হওয়ার ও অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়,গত ৫ আগষ্টের পর  নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা প্রশাসনের কাজের অংশ হিসেবে বালু লুটপাট বন্ধে  অবস্থান নেন।  তাকে প্রায় প্রতিদিনই  অভিযান চালাতে হয় বালু লুটপাট  বন্ধে । অভিযোগ রয়েছে তাকে কোনভাবে দমাতে না পেরে বালুখেকোরা নানা অযুহাতে  তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে মাঠে নামে। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের দোসর খেতাব প্রাপ্ত হয়ে গতমাসে  বদলি হতে  হয় তাকে । অবৈধ বালুর গাড়ি আটক করে আওয়ামী লীগের দোসর খেতাব পান ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেলসহ স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক । 

জানা যায়,  গত ২৭ জানুয়ারি রাতে  ঝিনাইগাতী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) অনিন্দা রানী ভৌমিক উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ বালুর বিরুদ্ধে  ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন। এসময় অবৈধ বালু ভর্তি একটি  গাড়ি আটকসহ ৪ শ্রমিককে ১০ দিনের করে কারাদণ্ড দেন। এঘটনায়   বালুদস্যুরা উপজেলা পরিষদ ঘেড়াও করে সাজা প্রাপ্ত শ্রমিকদের ছারিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে।  তারা  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেলকে আওয়ামী লীগের দোসর খেতাব দিয়ে তাকেসহ  স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয় বলে জানায় উপজেলা প্রশাসন । পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। 

বন বিভাগের নালিতাবাড়ী উপজেলার  মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান বন এলাকা থেকে  বালু লুটপাট বন্ধে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে তারা হুমকিধমকির মধ্যে রয়েছেন।
ময়মনসিংহ  বনবিভাগের ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া ফরেষ্ট রেঞ্জে কর্মরত সহকারি বন সংরক্ষক এসডি মো,তানভীর আহমেদ ইমন বলেন লোকবলের অভাবে ও নিরাপত্তাজনিত কারনে বল এলাকা থেকে পাথর বালু লুটপাট বন্ধ করতে তাকে হিমসিম খেতে হচ্ছে । তবে লোকবল বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

জানা গেছে, ,আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১৫ বছরও    বালু লুটপাট করা  হয়  ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে। তবে সে সময় শুধু নদীতেই সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে নতুন করে অসংখ্য বালু মহালের আবির্ভাব ঘটেছে।  থেমে নেই বেপরোয়াভাবে বালু লুটপাট।   বালুদস্যুদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে পরেছে  নদী

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
lube
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat