×
  • প্রকাশিত : ২০২৫-১০-২০
  • ১৫ বার পঠিত
গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি:

গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন মিয়া এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। একদিকে তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন হত্যা মামলায় র‍্যাবের হাতে আটক হয়ে কারাভোগ করেছেন, অপরদিকে তার বিরুদ্ধে ১৪ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষক সংগঠন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ (স্বাশিপ)–এর গাজীপুর জেলা সভাপতি হিসেবে প্রশাসনিক প্রভাব ও রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে তিনি শিক্ষক নিয়োগ, কোচিং ফি বণ্টন, মার্কেট পজিশন বিক্রয় ও ভবন ভাড়া সংক্রান্ত লেনদেনে ব্যাপক দুর্নীতি করেছেন। টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন খাতের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অভিযোগে বলা হয়, ২০২৫ সালের এইচএসসি কোচিং ফি ও বোর্ড ফি বাবদ প্রাপ্ত ১৩ লক্ষ টাকা শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন করা হয়নি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির অধীন তিনটি মার্কেটের মোট ১৬১টি দোকান থেকে দোকান বিক্রয় ও ভাড়ার টাকা হিসাব বহির্ভূতভাবে আদায় করা হয়েছে। এ বিষয়ে গভর্নিং বডির ৪৯ নং সভায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন অভিভাবক সদস্য মো. মাহবুবুর রহমান শাহিন, এবং সদস্য ছিলেন শিক্ষক প্রতিনিধি আনিসুর রহমান, সহকারী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইব্রাহিম, সিনিয়র প্রভাষক লতিফা পারভীন ও সিনিয়র শিক্ষক আজিজুল হক রাজু। তদন্ত কমিটি দলিল, ব্যাংক রশিদ ও দোকান মালিকদের জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে ১৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে ৩৫ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে ১৪ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকার আর্থিক অসঙ্গতি ও আত্মসাতের তথ্য উঠে আসে। অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া ২০১৩ সালের ২৮ মে টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজে যোগ দেন। শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন, সরকারি বেতনের পাশাপাশি তিনি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাসে ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা অতিরিক্ত বেতন গ্রহণ করতেন।  তিনি ২২ এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত এই টাকা নিয়েছেন। অপরদিকে অনান্য শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান থেকে দিতেন ৯ হাজার ৬'শ টাকা যা চরম বৈষম্য এবং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিধি-বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া প্রতিষ্ঠানটির মূল ভবনের একটি অংশ তার বোনের নামে পজিশন হস্তান্তর করেন, কোনো আর্থিক লেনদেন ছাড়াই।
এছাড়া অনুমোদনবিহীনভাবে পুরনো একতলা মার্কেটের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ দ্বিতীয় তলা নির্মাণ করে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব দোকানের অর্থও প্রতিষ্ঠানের হিসাব বহির্ভূত।
তদন্ত কমিটির ভাষায়, এই অনিয়ম শুধু আর্থিক নয়, কাঠামোগত ও নিরাপত্তার জন্যও মারাত্মক হুমকি।
উক্ত অনিয়মের ঘটনায় টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ গত ২২সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), গাজীপুর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালকের নিকট, এবং গাজীপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে। অভিযোগপত্রে শিক্ষকরা লিখেছেন আমাদের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে সুনাম ও ঐতিহ্যের প্রতীক। কিন্তু অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়ার প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতা ও আর্থিক অনিয়মের কারণে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের মুখে। উপরোক্ত দুর্নীতি ও আত্মসাথের ঘটনায় ইতিমধ্যে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে সিআইডি পুলিশ বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে। শিক্ষক ও কর্মচারীদের দাবি তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীকে চিহ্নিত করে প্রতিষ্ঠানের আত্মসাৎকৃত অর্থ উদ্ধার ও ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করা হোক। শুধু দুর্নীতিই নয়-অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়ার বিরুদ্ধে রয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হত্যা মামলার অভিযোগ। সেই মামলায় র‍্যাব তাকে আটক করে এবং তিনি বেশ কিছুদিন কারাভোগ করে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি আবারও পূর্বের পদে ফেরার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।  শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি, অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া জামিনে এসে বিভিন্ন মহলে প্রভাব খাটিয়ে পুনরায় দায়িত্বে ফিরে আসার তদবির করছেন। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, যে ব্যক্তি হত্যা মামলার আসামি ও দুর্নীতির অভিযুক্ত, তাকে পুনরায় অধ্যক্ষ পদে বসানো মানে ন্যায়বিচারের প্রতি আঘাত। এ বিষয়ে গাজী জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আল মামুন তালুকদার এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান আমি শুনেছি জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখত অভিযোগ করেছে, তদন্ত কমটিতে আমাকে যদি রাখে তাহলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তিনি আরো জনান অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়ার বিরুদ্ধে বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা মামলা ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে আমি শুনেছি এবং তিনি জেল খেটেছেন বলে জানতে পেরেছি।  প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়ার পর কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজ গাজীপুর অঞ্চলের শিক্ষার অন্যতম প্রতীক। কিন্তু অধ্যক্ষ আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগে এই প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি এখন প্রশ্নবিদ্ধ। শিক্ষক-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, আমরা চাই, এই প্রতিষ্ঠানের নাম যেন আর কলঙ্কিত না হয়। সমাজের সচেতন নাগরিক ও সাংবাদিক সমাজ এগিয়ে আসুক-প্রতিষ্ঠানকে রাহুরগ্রাস থেকে মুক্ত করতে। একদিকে ছাত্র হত্যা মামলার আসামি, অন্যদিকে ১৪ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত-দুই ভারী অভিযোগে এখন অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া আলোচনার কেন্দ্রে। তদন্ত যদি নিরপেক্ষ ও পূর্ণাঙ্গ হয়, তাহলে টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের পুরো চিত্র উঠে আসবে বলে মনে করছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
lube
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat