×
  • প্রকাশিত : ২০২৫-১১-০৫
  • ২৬ বার পঠিত
রিয়ানা আমিন:  ফ্রুকটোজযুক্ত খাবার লিভারে চর্বির সঞ্চয় ঘটায়, যা নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বা NAFLD-এর প্রধান কারণ। আধুনিক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে NAFLD সবচেয়ে সাধারণ লিভার সমস্যা, উন্নত দেশগুলোর প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ এতে আক্রান্ত। মোটা বা ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে এই সমস্যা ৯০ শতাংশের বেশি দেখা যায়।
গ্লুকোজের তুলনায় ফ্রুকটোজ লিভারে সহজেই চর্বিতে রূপান্তরিত হয়। লিভারে চর্বি জমা হওয়ায় প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে লিভারের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। এছাড়াও, এটি ইনসুলিন প্রতিরোধ সৃষ্টি করে এবং ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও অন্যান্য মেটাবলিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। 

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক এক গবেষণা দেখিয়েছে, মাত্র নয় দিনের জন্য অতিরিক্ত ফ্রুকটোজযুক্ত খাবার ও পানীয় বাদ দিলেই লিভারের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ পুনরুদ্ধার শুরু করে। সাধারণত মানুষ চিনি যুক্ত পানীয় ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সতর্কবার্তা শুনে থাকে। এই ধরনের অতিরিক্ত চিনি লিভারের কোষকে ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যা ভবিষ্যতে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে। 

গবেষণার ফলাফল টুরো ইউনিভার্সিটি ও ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, সান ফ্রান্সিসকো-এর গবেষকরা মোটা লাতিনো ও আফ্রিকান-আমেরিকান যুবকদের মধ্যে উচ্চ ফ্রুকটোজযুক্ত খাদ্যের প্রভাব পরীক্ষা করেন। অংশগ্রহণকারীদের খাদ্য তালিকায় ফ্রুকটোজ সমৃদ্ধ খাবারের পরিবর্তে গ্লুকোজ সমৃদ্ধ খাবার রাখা হয়, তবে দৈনিক ক্যালোরি অপরিবর্তিত থাকে। মাত্র ৯ দিনের মধ্যে MRI পরীক্ষায় দেখা যায়, লিভারের চর্বি প্রায় ২০ শতাংশ কমে যায় এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। 

গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, অংশগ্রহণকারীদের ওজন পরিবর্তন প্রায় নগণ্য হওয়ায় (১ শতাংশের কম) ফলাফল সরাসরি ফ্রুকটোজ হ্রাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই গবেষণা প্রমাণ করে যে NAFLD প্রাথমিক পর্যায়ে স্থায়ী নয় এবং খাদ্য পরিবর্তনের মাধ্যমে দ্রুত উল্টো যাওয়া সম্ভব। 

ফ্রুকটোজের খারাপ প্রভাব
সোডা এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকা হাই-ফ্রুকটোজ কর্ন সিরাপ (HFCS) আধুনিক খাদ্যাভ্যাসে ফ্রুকটোজের মাত্রা বাড়িয়েছে। অতিরিক্ত ফ্রুকটোজ গ্রহণ লিভার রোগ ও স্থূলতার প্রধান কারণ। প্রক্রিয়াজাত খাবারের ফ্রুকটোজ প্রাকৃতিক ফলের চিনি থেকে আলাদা, কারণ এতে তন্তু ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ কম থাকে।
চিনি বাদ দেওয়ার ব্যবহারিক পরামর্শ
চিনি যুক্ত পানীয় ও সোডার পরিবর্তে পানি, হার্বাল টি বা ফল-যুক্ত প্রাকৃতিক জল পান করুন। 

প্রক্রিয়াজাত খাবারের লেবেল পরীক্ষা করে HFCS বা অতিরিক্ত চিনি থাকলে তা এড়িয়ে চলুন। 

প্রাকৃতিক চিনি ও তন্তুযুক্ত সম্পূর্ণ খাবার গ্রহণ করুন। 

বাড়িতে রান্না করলে উপাদান ও চিনি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। 

তবে ১০০% ফলের রস সীমিত পরিমাণে পান করুন, কারণ এতে ফ্রুকটোজের মাত্রা এখনও বেশি থাকে। 

মোটা, ডায়াবেটিস বা লিভার সমস্যা সন্দেহ হলে সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

গবেষকরা বলছেন, মাত্র কয়েক দিনের ফ্রুকটোজ হ্রাস লিভারকে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে এবং ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত খাদ্য পরিবর্তন ও সচেতন জীবনধারা হৃদয়, লিভার এবং সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
lube
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat