- প্রকাশিত : ২০২৫-১০-২৮
- ১০ বার পঠিত
হাবিবুল্লাহ মীর, স্টাফ রিপোর্টার:
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের রূপগঞ্জ এলাকাটি যেন এখন নিত্য ভোগান্তির আরেক নাম। মহাসড়কের প্রায় ৬ কিলোমিটার জুড়ে ভয়াবহ যানজটে নাকাল হচ্ছেন হাজার হাজার যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিক। গতকাল রোববার (২৬ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হওয়া এই অচলাবস্থা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও প্রকট আকার ধারণ করে।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টার দিকে মহাসড়কের বরাব বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে যানজট সৃষ্টি হতে শুরু করে। এর তীব্রতা বাড়তে বাড়তে দুপুর ৩টা নাগাদ তা কাঁচপুর থেকে মৈকুলি পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হয়। মহাসড়কের উভয় দিকেই যানবাহন দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ে থাকে। এই দীর্ঘ জটে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীসাধারণ, পরিবহন শ্রমিক ও পথচারীদের।
হাইওয়ে পুলিশ এবং ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়কের বিভিন্ন অংশে থাকা খানাখন্দ ও গভীর গর্তের কারণে যানবাহন চলাচলে মারাত্মক ধীরগতি তৈরি হচ্ছে। মূলত এই ধীর গতির কারণেই সকাল থেকে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। দুপুরের পর সড়কে যানবাহনের স্বাভাবিক চাপ বাড়লে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যায় এবং যানজট বিস্তৃত হয় ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত।
ভয়াবহ এই জটে আটকে পড়া যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ আর হতাশা বিরাজ করছে। বিশেষ করে দুপুরের তীব্র রোদে যানজটে বসে থাকাটা যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা।
যাত্রী সাইফুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুপুর দেড়টায় মৈকুলি এলাকা থেকে জ্যামে আটকা পড়েছি। কাঁচপুর আসতে আমার এক ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে। দুপুরের রোদ্রে প্রচণ্ড গরমে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। এভাবে কতদিন চলবে এই যানজট? যানজট নিরসনে কেন স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না?
সিএনজি চালক আমজাদ হোসেনের অবস্থাও তথৈবচ। তিনি হতাশা নিয়ে বলেন, এই সড়কে ভুলতা গাউছিয়া থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত হর হামেশাই থেমে থেমে যানজট লেগেই থাকে। জ্যামে আটকা পড়ে কোনোদিন মালিকের জমাটাও ঠিকমতো উঠাইতে পারি না। তিনটা বাজে কাঁচপুর থেকে ট্রিপ নিয়ে রওনা হয়েছি, অথচ এক ঘণ্টায় সবেমাত্র রূপসী পৌঁছাতে পেরেছি।
গ্লোরি পরিবহনের চালক সিদ্দিক হোসেন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, পাঁচ মিনিটের রাস্তা মৈকুলি থেকে বরাবো অতিক্রম করতে আমার ৫০ মিনিট সময় লেগেছে। এই সড়কের যানজট শেষ হবে কবে, আমরা সবাই সেই দিন গুনছি।
শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশের পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন যানজটের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্বীকার করেন, তারাবো বিশ্বরোড থেকে বরাব পর্যন্ত রাস্তায় খানাখন্দের কারণে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। যেখানে একটি গাড়ি ৮০ থেকে ১০০ মাইল গতিতে আসার কথা, সেখানে এসে সেটি ১৫ থেকে ২০ মাইল গতিতে চলতে বাধ্য হচ্ছে। এতে গাড়ির চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, মহাসড়ক উন্নীতকরণ কাজের জন্য সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতাও একটি বড় কারণ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চালকদের বেপরোয়া মনোভাব। তারা আগে যাওয়ার জন্য নিয়ম ভেঙে বিপরীত রুটে গাড়ি ঢুকিয়ে একাধিক লাইন তৈরি করে ফেলছে, যা যানজটকে আরও বিস্তৃত করছে।
পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন জনবল সংকটের কথাও তুলে ধরেন এবং জানান, হাইওয়ে পুলিশ যানজট নিরসনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ভুলতা থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত এই অংশে প্রায় প্রতি নিয়তই লেগে থাকা এই যানজট নিরসনে সড়ক মেরামতের পাশাপাশি স্থায়ী ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা।
নিউজটি শেয়ার করুন
এ জাতীয় আরো খবর..