মুজাহিদ হোসেন
নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি:
নওগাঁর বদলগাছীতে টিসিবির আওতায় ৫ কেজি আটা বিতরণ কার্যক্রম নিয়ে যেন বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কিছু সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে উপস্থাপনা এমন হয়েছে, যেন দেশে দুর্ভিক্ষ নেমে এসেছে। অথচ বাস্তব চিত্র ভিন্ন—সেখানে রয়েছে পরিকল্পনার ঘাটতি, অনিয়ম ও ব্যবসার সুযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আটা বিতরণের দিন প্রতিটি ডিলার পয়েন্টে নির্দিষ্টভাবে মাত্র ৬৬ জনকে ৫ কেজি করে আটা দেওয়া হয়। গোটা বদলগাছী সদরে মিলছে মোট ১০০০ কেজি আটা, অর্থাৎ সর্বোচ্চ ২০০ জন মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। এই সীমিত পরিসরে বিতরণ হওয়ায় রাতভর লাইন ধরে থাকার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। লাইনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে কেউ কেউ আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “আটা নিয়ে বাড়ি গিয়ে রুটি খাবো বলে সারা রাত বসে আছি।”
কিন্তু বাস্তবতা হলো—অনেক ক্ষেত্রে একই পরিবারের ৪/৫ জন সদস্য আলাদা ডিলার পয়েন্টে গিয়ে আটা তুলছেন। ফলে একটি পরিবার একদিনে ২৫ কেজি পর্যন্ত আটা সংগ্রহ করছে। পরে তারা বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। ২৪ টাকা কেজি দরে ১২০ টাকায় আটা সংগ্রহ করে ৪০ টাকা কেজি দরে ২০০ টাকায় বিক্রি করছে। এতে প্রকৃত সুবিধাভোগীরা বঞ্চিত হচ্ছে, আর তৈরি হচ্ছে একটি অস্বাস্থ্যকর বাজার ব্যবস্থা।
এর পাশাপাশি লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক বয়স্ক মানুষকে দেখা গেছে। তাদের পরিবারের লোকজন কঠোরভাবে বলে দিয়েছেন—“আটা না নিয়ে ঘরে ফেরা যাবে না।” এ ধরনের মানসিক চাপ তাদের জন্য সত্যিই মর্মান্তিক হয়ে উঠছে।আবার একই ব্যাক্তি প্রায় প্রতিদিন আটা তুলতেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আটা বিতরণে কর্তৃপক্ষের সঠিক পরিকল্পনা ও নজরদারির অভাবই বিশৃঙ্খলার মূল কারণ। সঠিক কৌশল অবলম্বন করলে এমন পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব ছিল। উদাহরণস্বরূপ—একটি ডিলার পয়েন্ট থেকেই প্রতিদিন ২০০ জনকে ১০০০ কেজি আটা বিতরণ করা গেলে রাতভর লাইন, বিশৃঙ্খলা কিংবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হতো না।
সাংবাদিকরা ঘটনাগুলোকে খানিকটা আবেগঘন ও নাটকীয়ভাবে পরিবেশন করায় সাধারণ মানুষের মনে হয়েছে, দেশে হয়তো সত্যিই দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। অথচ মূলত এটি একটি সীমিত পরিসরের কর্মসূচি, যার বাস্তবায়নে দায়িত্বশীলদের সুপরিকল্পনার ঘাটতি স্পষ্ট।