×
  • প্রকাশিত : ২০২৫-০৯-৩০
  • ৪৫ বার পঠিত
ফেনী প্রতিনিধিঃ 

ফেনী শহরের প্রাণকেন্দ্র ট্রাংক রোডে দাঁড়িয়ে আছে এক আশ্চর্য দৃশ্য—গায়ে গা লাগানো মসজিদ আর মন্দির। কয়েক গজের ব্যবধানে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদ ও জয়কালী মন্দির। দেড়শ বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে পাশাপাশি চলছে নামাজ ও পূজা। অথচ একবারও ঘটেনি কোনো দ্বন্দ্ব, কোনো বিভেদ। বরং জায়গাটি হয়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জীবন্ত প্রতীক।

১৮৭৬ সালে ত্রিপুরার রাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর ধর্মীয় সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সমান অংশ জমি বরাদ্দ দেন মসজিদ ও মন্দিরের জন্য। সেই থেকে এই দুই উপাসনালয় যেন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে। ভোরবেলা ফজরের আজানে সমবেত হয় মুসল্লিরা, নামাজ শেষে তারা ঘরে ফেরেন। আর তার কিছুক্ষণ পরেই মন্দিরে ভেসে ওঠে শঙ্খ আর উলুধ্বনি। দুই ভিন্ন ধর্মীয় আহ্বান, অথচ পাশাপাশি প্রতিধ্বনিত হয়ে যেন গড়ে তোলে সম্প্রীতির সংগীত।

স্থানীয় মুসল্লি আজিজ উল্লাহ আহমদী হাসিমুখে বলেন, “আমরা মসজিদে নামাজ আদায় করি, ওদিকে মন্দিরে চলে পূজা। এতে কখনো কারও অসুবিধা হয়নি। এটাই আমাদের বহু বছরের ঐতিহ্য।”

মন্দির প্রাঙ্গণে পূজা দিতে আসা ভক্ত সুপ্রিয়া রাণী দাসও জানালেন তার অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, “আমরা ছোটবেলা থেকে দেখছি, একদিকে মসজিদে আজান হচ্ছে, অন্যদিকে আমাদের পূজা চলছে। কখনো কোনো ঝামেলা হয়নি। বরং মুসলিম ভাইয়েরা আমাদের পূজার সময় সহযোগিতা করেন, আমরাও ঈদের আনন্দে শুভেচ্ছা জানাই। এভাবেই আমাদের সম্প্রীতি টিকে আছে।”

শুধু নামাজ আর পূজাই নয়—এখানে বসে পূজার মেলা, হয় ওয়াজ মাহফিল, এমনকি জানাজাও আদায় করা হয়। দুই সম্প্রদায়ের মানুষ পরস্পরের উৎসবে যোগ দেন, একে অপরের পাশে দাঁড়ান।

মন্দিরের পুরোহিত নিমাই চক্রবর্তীও একই কথা জানান। তার ভাষায়, “বিরোধ বা ঝামেলা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে আমরা সবাই আমাদের অনুষ্ঠান পালন করি।”

মন্দির কমিটির সভাপতি বিরাজ কান্তি মজুমদার বললেন, “পূজার সময় আমরা মুসলিম ভাইদের নিমন্ত্রণ করি, তাঁরা আসেন, সহযোগিতাও করেন। এত বছরেও কখনো বিরোধ হয়নি।”

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর ভাষায়, “এখানে হিন্দু-মুসলমানের কোনো ভেদাভেদ নেই। বিপদে-আপদে আমরা একে অপরের পাশে দাঁড়াই। যদি সারা দেশ এভাবে চলে, তবে কোথাও কোনো অশান্তি থাকবে না।”

ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, “শত বছরেরও বেশি সময় ধরে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে এই মসজিদ-মন্দির। এখানে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ধর্ম পালন করছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিদিন মানুষ আসে শুধু এই সম্প্রীতির নিদর্শন দেখার জন্য।”

ফেনীর ট্রাংক রোডের এই ছোট্ট জায়গাটিতে তাই মেলে এক বিরল দৃশ্য—মিনারে আজানের ধ্বনি আর মন্দিরে শঙ্খধ্বনি পাশাপাশি মিলেমিশে যেন এক মহামন্ত্র উচ্চারণ করে। ভিন্নতায় ভরা এই সহাবস্থানই প্রমাণ করে, সম্প্রীতির আসল রূপ হলো একে অপরকে গ্রহণ করা, পাশে দাঁড়ানো এবং ভিন্নতার মাঝেও মিল খুঁজে পাওয়া।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
lube
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat