×
সদ্য প্রাপ্ত:
মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণ পরিশোধের দাবি সিলেটে দুই ট্রাক সাদাপাথর জব্দ, চালকদের দেড় লাখ টাকা জরিমানা হবিগঞ্জে জামায়াত প্রার্থীর গাড়িতে দুর্বৃত্তদের হামলা ঢাকার ফ্লাইট নামছে চট্টগ্রাম-কলকাতায় মক্কায় এক সপ্তাহে ১৩.৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ দুটি পবিত্র মসজিদ পরিদর্শন করেছেন শিক্ষকদের ‘মার্চ টু সচিবালয়’ শুরু, পুলিশের বাধা মিরপুরে ভয়াবহ আগুনে ৯ জনের মৃত্যু শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলায় পাচারকালে ৩৮০ বস্তা সরকারি চাল জব্দ রূপগঞ্জে ১৩ বছর বয়সী শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে বৃদ্ধ গ্রেফতার বাংলাদেশী চিত্রশিল্পী ও লেখক শহিদুল আলম কে আটোক ইসরায়েলি বাহিনীর
  • প্রকাশিত : ২০২৫-১০-২৫
  • ১৬ বার পঠিত
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ:

আমরা এমন এক সমাজে বাস করি, যেখানে “মানুষ” নামক সত্তার মূল্য অনেক সময় নির্ধারিত হয় তার শরীরের গঠন ও লিঙ্গ পরিচয়ের ভিত্তিতে। কিন্তু এই প্রচলিত বিভাজনের বাইরে যারা জন্ম নেয়— তারা হয়ে পড়ে সমাজের প্রান্তিক মানুষ, ভুল বোঝাবুঝি ও বৈষম্যের শিকার। এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটি নাম— ইন্টারসেক্স মানুষ। তারা জন্মগতভাবে এমন শারীরিক বা জিনগত বৈশিষ্ট্য নিয়ে পৃথিবীতে আসে, যা প্রচলিত পুরুষ বা নারীর সুনির্দিষ্ট সীমায় পড়ে না। তাদের জীবনের প্রতিটি ধাপ— জন্ম, শৈশব, কৈশোর ও প্রাপ্তবয়স্কতা— চিকিৎসার হস্তক্ষেপ, সামাজিক অবহেলা এবং মানসিক চাপে জর্জরিত থাকে। প্রতি বছর ২৬ অক্টোবর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক ইন্টারসেক্স সচেতনতা দিবস। এই দিনটি কেবল একটি পরিচয়ের দাবিতে সীমাবদ্ধ নয়; এটি মানুষের শরীরের স্বাধীনতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও মর্যাদার সংগ্রামের প্রতীক।

> ইন্টারসেক্স কী — বৈজ্ঞানিকভাবে বোঝা প্রয়োজন

জীববিজ্ঞানের পরিভাষায় “ইন্টারসেক্স” বলতে বোঝায় এমন জন্মগত অবস্থা, যেখানে শিশুর ক্রোমোজোম (যেমন XX বা XY), হরমোন বা জননাঙ্গের গঠন সাধারণ পুরুষ বা নারীর মানদণ্ডে পুরোপুরি মেলে না।

ইন্টারসেক্স অবস্থার ধরন ৩০টিরও বেশি। এর মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হলো—

১. অ্যান্ড্রোজেন অসংবেদনশীলতা সিনড্রোম (AIS): XY ক্রোমোজোম থাকা সত্ত্বেও শরীরে পুরুষ হরমোনের প্রভাব পড়ে না, ফলে বাহ্যিকভাবে নারীর মতো গঠন তৈরি হয়।
২. জন্মগত অ্যাড্রেনাল হাইপারপ্লাসিয়া (CAH): XX ক্রোমোজোম থাকা সত্ত্বেও হরমোনের ভারসাম্যহীনতায় জননাঙ্গ পুরুষসদৃশ হয়।
৩. গোনাডাল ডিসজেনেসিস: ডিম্বাশয় বা অণ্ডকোষ পুরোপুরি বিকশিত হয় না।
৪. মোজাইক ক্রোমোজোমাল ধরন (XX/XY): একই দেহে দুটি লিঙ্গ ক্রোমোজোম একসাথে উপস্থিত থাকে।

এই অবস্থাগুলো কোনো “রোগ” নয়; বরং মানুষের প্রাকৃতিক জিনগত বৈচিত্র্যের অংশ।
তবু চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে বহুদিন ধরে এটিকে “ত্রুটি” বা “অস্বাভাবিকতা” হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এর ফলে বহু ইন্টারসেক্স শিশু অল্প বয়সেই অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের শিকার হয়েছে।

> ইন্টারসেক্স শিশুর স্বাস্থ্য বাস্তবতা: চিকিৎসাবিজ্ঞানের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ

১. জন্মের পরপরই অস্ত্রোপচারের চাপ

বিশ্বের বহু দেশে ইন্টারসেক্স শিশুর জন্মের পরপরই প্রশ্ন তোলা হয়— “ছেলে না মেয়ে?”
এই প্রশ্নের উত্তরে চিকিৎসকরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বলেন, ফলে অভিভাবকরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং অনেক সময় তাড়াহুড়ো করে অস্ত্রোপচারে সম্মতি দেন। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন  স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছে—ইন্টারসেক্স শিশুদের ওপর অপ্রয়োজনীয় ও অনিচ্ছাকৃত অস্ত্রোপচার মানবাধিকারের লঙ্ঘন।”

> কারণ, এসব অস্ত্রোপচারে— * যৌনাঙ্গের স্বাভাবিক স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে,
* ভবিষ্যতে যৌন জীবনে ব্যথা বা সংবেদনহীনতা দেখা দেয়, * এবং মানসিকভাবে আত্মপরিচয়ের গভীর সংকট তৈরি হয়।

২. মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মপরিচয়ের সংকট

কৈশোরে পৌঁছে অনেক ইন্টারসেক্স শিশু বুঝতে পারে— তাদের শরীর অন্যদের মতো নয়।
এই উপলব্ধি অনেক সময় গভীর মানসিক আঘাত, হতাশা, আত্মহীনতা এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতা পর্যন্ত বাড়িয়ে তোলে।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন— যদি পরিবার ও সমাজ খোলামেলা ও সহায়ক পরিবেশ না দেয়, তবে শিশুটি নিজের শরীরকে ঘৃণা করতে শুরু করে। এটি “দেহ বিকৃতি-ভীতি” নামে মানসিক সমস্যায় রূপ নিতে পারে।

৩. প্রজনন ও হরমোনজনিত জটিলতা

অনেক ইন্টারসেক্স ব্যক্তি বন্ধ্যাত্ব, হরমোন ভারসাম্যহীনতা, বিপাকীয় সমস্যা বা হাড়ের ঘনত্ব হ্রাসজনিত রোগে ভোগেন।
তাদের নিয়মিত হরমোন পরীক্ষা ও চিকিৎসা পরামর্শ প্রয়োজন, যা বাংলাদেশের মতো দেশে এখনো দুর্লভ।

৪. চিকিৎসাব্যবস্থার নৈতিক সীমাবদ্ধতা

চিকিৎসা নীতিতে এখন নতুন একটি ধারণা স্বীকৃত— “কোনো ক্ষতি করো না, বরং সচেতন সম্মতি নিশ্চিত করো।” অর্থাৎ চিকিৎসক যেন এমন কিছু না করেন যা রোগীর শরীর ও মনের ওপর স্থায়ী ক্ষতি আনে, এবং রোগী (বা অভিভাবক) যেন পুরোপুরি বোঝেন কী করা হচ্ছে। দুঃখজনকভাবে, ইন্টারসেক্স শিশুদের ক্ষেত্রে এই নীতি অনেক সময় মানা হয় না।

> ইন্টারসেক্স মানুষের জনস্বাস্থ্য সমস্যা: নীরব সংকট

বাংলাদেশের মতো ধর্মপ্রাণ ও জনবহুল দেশে ইন্টারসেক্স মানুষ প্রায় অদৃশ্য।
তবে জনস্বাস্থ্য দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের অবস্থা গভীরভাবে উদ্বেগজনক।

১. চিকিৎসা সুবিধার অভাব: দেশে কোনো ইন্টারসেক্স-বিশেষায়িত হাসপাতাল বা ক্লিনিক নেই। জিনগত ও হরমোন পরীক্ষা ব্যয়বহুল হওয়ায় অধিকাংশ শিশু নির্ণয়হীন থেকে যায়।
২. মানসিক সহায়তার সংকট: স্কুলে উপহাস, পরিবারে অবহেলা এবং সামাজিক লজ্জা তাদের আত্মগোপনে বাধ্য করে। ফলে আত্মক্ষতি ও আত্মহত্যার চিন্তা বেড়ে যায়।
৩. চিকিৎসক প্রশিক্ষণের ঘাটতি: চিকিৎসা পাঠ্যক্রমে “ইন্টারসেক্স” বা “খুনসা” বিষয়ে আলাদা অধ্যায় নেই। ফলে অনেক চিকিৎসকই জানেন না কীভাবে এ ধরনের শিশুর সঙ্গে সংবেদনশীল আচরণ করতে হয়।
৪. স্বাস্থ্যনীতিতে উপেক্ষা: জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে এখনো লিঙ্গ বৈচিত্র্য বা ইন্টারসেক্স বিষয়টি উল্লেখ নেই। অথচ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) স্পষ্টভাবে বলে— “কাউকে পিছিয়ে রাখা যাবে না।”
৫. সামাজিক সচেতনতার অভাব: সমাজে এখনো অনেকেই ইন্টারসেক্স ও তৃতীয় লিঙ্গকে এক করে দেখে, যা ভুল ধারণা সৃষ্টি করে। ফলে ইন্টারসেক্স শিশুরা প্রকৃত পরিচয় হারিয়ে ফেলে এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে ভুলভাবে মিশে যায়।
৬. ধর্মীয় ও আইনি পরামর্শকেন্দ্রের অনুপস্থিতি: এমন কোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নেই, যেখানে ইন্টারসেক্স পরিবার ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ, আইনি অধিকার ও চিকিৎসা পরামর্শ একসাথে পেতে পারে। ফলে পরিবারগুলো বিভ্রান্ত ও একাকী হয়ে পড়ে।

> ইসলামের দৃষ্টিতে ইন্টারসেক্স ও নৈতিক চিকিৎসা

ইসলামে ইন্টারসেক্স মানুষকে “খুনসা” বলা হয়। নবী করিম (সা.) ও খলাফায়ে রাশেদীনের যুগে খুনসা ব্যক্তিদের নিয়ে ফিকহে বিশদ আলোচনা রয়েছে। ইসলামী চিকিৎসা নীতিতে বলা হয়েছে— “রোগ নিরাময় করা উত্তম, কিন্তু আল্লাহর সৃষ্ট বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করা নয়।” অতএব, ইন্টারসেক্স শিশুর অস্ত্রোপচার যদি চিকিৎসাগতভাবে অপরিহার্য না হয় (যেমন প্রস্রাব বা জীবনধারণে সমস্যা নেই), তবে তা ইসলামী নীতির পরিপন্থী। বিখ্যাত ফকিহ ইবনু কুদামা তাঁর আল-মুগনি গ্রন্থে লিখেছেন— খুনসা ব্যক্তির পরিচয় আল্লাহর নির্ধারণ; মানুষ যেন শরীর পরিবর্তন করে বিভ্রান্ত না হয়।”অর্থাৎ ইসলাম এই বৈচিত্র্যকে রোগ নয়, বরং সৃষ্টিগত বাস্তবতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

৭. ইসলামী সমাজে খুনসা ব্যক্তির অধিকার: ইসলাম প্রতিটি মানুষের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। খুনসা ব্যক্তি যদি কোনো নির্দিষ্ট লিঙ্গে প্রবেশ করতে না পারেন, তবে তাদের উত্তরাধিকার, নামাজের স্থান ও সামাজিক দায়িত্ব নির্ধারণে ফিকহে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা আছে। এটি প্রমাণ করে ইসলাম তাদের উপেক্ষা করেনি, বরং সহমর্মিতার সঙ্গে গ্রহণ করেছে।
৮. চিকিৎসায় শরিয়াভিত্তিক নৈতিকতা: কোনো চিকিৎসা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শরিয়াভিত্তিক নীতিমালা ও রোগীর ভবিষ্যৎ কল্যাণ যাচাই করা আবশ্যক। আলেম, চিকিৎসক ও অভিভাবকের পরামর্শে যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়াই ইসলামি দৃষ্টিতে সর্বোত্তম।

>> সমাজ, ধর্ম ও রাষ্ট্রের যৌথ দায়িত্ব

ইন্টারসেক্স মানুষদের জন্য সহানুভূতি যথেষ্ট নয়প্রয়োজন কাঠামোগত পরিবর্তন।

> পরিবার: * অভিভাবক যেন জন্মের সময় সন্তানকে “অস্বাভাবিক” মনে না করেন। * নিরাপত্তা ও মানসিক সহায়তা দিতে হবে।

> চিকিৎসক সমাজ: * চিকিৎসা শিক্ষায় “ইন্টারসেক্স স্বাস্থ্য ও নৈতিকতা” অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। * প্রতিটি চিকিৎসা সিদ্ধান্ত নৈতিক কমিটি দ্বারা যাচাই করা উচিত।

> ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ: * খুতবা, ওয়াজ ও দাওয়াতে ইন্টারসেক্স বিষয়ে মানবিক ব্যাখ্যা প্রচার করা দরকার। * খুনসা ব্যক্তিদের সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।

> সরকার ও আইনপ্রণেতা: - * জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টে “ইন্টারসেক্স” বিকল্প সংযোজন করা * অপ্রয়োজনীয় শিশুসার্জারি নিষিদ্ধকরণ আইন প্রণয়ন এবং শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী নীতি বাস্তবায়ন করা জরুরি।

> বৈশ্বিক অগ্রগতি ও ইতিবাচক পরিবর্তন

* বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (২০২১): ইন্টারসেক্সকে “লিঙ্গ বৈশিষ্ট্যের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য” হিসেবে ঘোষণা করেছে।

* ইউনিসেফ: বলেছে— শিশুর শরীর সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত শিশুর সচেতন বয়সোপযোগী সম্মতির ওপর নির্ভর করা উচিত।

* জার্মানি (২০১৮): জন্ম নিবন্ধনে তৃতীয় লিঙ্গ “বৈচিত্র্য ” স্বীকৃতি দিয়েছে।

* মাল্টা (২০১৫): অপ্রয়োজনীয় সার্জারি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।

* অস্ট্রেলিয়া, নেপাল ও ভারত: নাগরিক নথিতে তৃতীয় লিঙ্গ স্বীকৃতি দিয়েছে। এসব উদাহরণ প্রমাণ করে— সভ্যতা ধীরে ধীরে শরীর নয়, বরং চেতনার বৈচিত্র্যকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।

পরিশেষে বলতপ চাই, ইন্টারসেক্স মানুষ কেবল লিঙ্গ বৈচিত্র্যের প্রতীক নন— তারা মানবতার আয়না। তাদের প্রতি আমাদের আচরণই প্রমাণ করে আমরা কতটা ন্যায্য, সভ্য ও মানবিক।
২৬ অক্টোবর আমাদের মনে করিয়ে দেয়— মানুষের শরীর, আত্মা ও পরিচয়— সবই আল্লাহর দান। প্রতিটি শরীরই সম্মান ও মর্যাদার দাবিদার।প্রয়োজন শুধু সহানুভূতি নয়— প্রয়োজন ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থা, নৈতিক চিকিৎসা নীতি ও সচেতন সমাজব্যবস্থা। যেদিন পরিবার, হাসপাতাল ও সমাজে ইন্টারসেক্স শিশুকে “স্বাভাবিক” চোখে দেখা হবে— সেদিনই মানবতা তার পূর্ণতা পাবে। কারণ, আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনো ত্রুটি নেই— ত্রুটি আছে কেবল আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
lube
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat